মুফতি সাইফুল ইসলাম:
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। মহান আল্লাহ অনেক ভালোবেসে তাদের তৈরি করেছেন এবং মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে পৃথিবীতে আসার পর মানুষের যা কিছু প্রয়োজন হবে তার সব কিছুর জোগান তিনি দিয়ে রেখেছেন।
পথহারা মানুষগুলোকে সুপথে ফেরানোর জন্য আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। আর যে যুগে যে বস্তুর বা বিষয়ের প্রভাব বেশি ছিল সেটির প্রভার দূর করতে আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুলদের কিছু মুজিজা বা অলৌকিক বিষয় দান করেছিলেন। যেমন—ঈসা (আ.) প্রেরিত হয়েছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির যুগে। তিনি জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন করে তুলতে পারার মতো অলৌকিক চিকিৎসার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে দুনিয়াতে এসেছিলেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে নিরাময় করব এবং মৃতকে জীবিত করব।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৪৯)
মুসা (আ.) নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন জাদুবিদ্যার চর্চা ও উৎকর্ষের যুগে। তাঁকেও আল্লাহ তাআলা এমন মুজিজা দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন, যা দিয়ে তিনি তৎকালীন জাদুকরদের দমন করেছিলেন। তিনি তাঁর লাঠি মাটিতে ফেললে তা বিরাট অজগরে পরিণত হতো। বগলের নিচ থেকে হাত বের করলে তা দীপ্তময় ও উজ্জ্বল হয়ে যেত। সুরা আরাফের ১০৭ ও ১০৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর মুসা তাঁর হাতের লাঠি নিক্ষেপ করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই তা এক অজগর সাপে পরিণত হলো; এবং তিনি তাঁর হাত বের করলেন আর সঙ্গে সঙ্গেই তা দর্শকদের কাছে শুভ্র উজ্জ্বল দেখাতে লাগল।’
মহানবী (সা.) প্রেরিত হয়েছেন আরব্য সাহিত্যচর্চার চূড়ান্ত উন্নতির যুগে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সর্বোৎকৃষ্ট মুজিজা হিসেবে দিয়েছেন আল কোরআন। যা সর্বোচ্চ মানের সাহিত্যসমৃদ্ধ ও অলংকারশাস্ত্রের বিবেচনায় এমন অত্যুঙ্গ শৃঙ্গে উন্নীত, যেকোনো মানুষের পক্ষে এর একটি আয়াত রচনা অসম্ভব। স্বয়ং কোরআন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে কোরআনের সবচেয়ে ছোট সুরার মতো একটি সুরা রচনা করতে। আরব্য সাহিত্যাকাশের সিংহপুরুষরা একত্রিত হয়েও সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারেনি। কিয়ামত পর্যন্ত কেউ পারবেও না।
শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে মুজিজা হিসেবে দেওয়া কোরআনের সবটুকুই বিজ্ঞানময়। কিয়ামত পর্যন্ত কোরআন মানুষের জন্য হিদায়াতের পথপ্রদর্শক ও সর্বকালের বিজ্ঞানীদের দিকনির্দেশক। পৃথিবীর বাস্তব ইতিহাস তার জ্বলন্ত সাক্ষী। যুগে যুগে পবিত্র কোরআনকে গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য বানিয়ে বিজ্ঞানীরা অভাবনীয় সব আবিষ্কার সামনে এনেছেন। রাসুল (সা.)-এর অনেক মুজিজাই বিজ্ঞানময়। চন্দ্র বিদীর্ণকরণ ও মিরাজের ঘটনা তো বিজ্ঞানীদের জন্য উন্মোচন করেছে অনেক গবেষণার দিগন্ত।
ইসলাম বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে ইসলামের কাজে ব্যবহার করতে শিখিয়েছে। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর একটি উদার ও অসংকোচ ঘোষণা আমাদের বিমোহিত করে। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের পার্থিব বিষয়ে বরং তোমরাই ভালো জানো।’ বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞান প্রযুক্তির গগনচুম্বী উন্নতির প্রতিও তিনি ইঙ্গিত করে গেছেন।
বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে মহৎ কাজে, মানবতার কল্যাণে যেন ব্যবহার করা হয় সেদিকে ধর্মপ্রাণ সচেতন সমাজকেই সদা সজাগ দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের সুরা আল-হাদিদের ২৫ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘আমি নাজিল করেছি লৌহ, যাতে রয়েছে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ।’
দুনিয়াতে যত শিল্প-কারখানা ও কলকবজা আবিষ্কৃৎত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে সবগুলোর মধ্যে লৌহের ভূমিকা সর্বাধিক। লৌহ ছাড়া কোনো শিল্প চলতে পারে না।
কাজেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে মানবতার সার্বিক কল্যাণে ব্যবহার করে আশীর্বাদ বানাব, নাকি অভিশাপ ডেকে আনব।
লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও মুহাদ্দিস