২০ লাখ ডোজ টিকা নিতে মুম্বাইয়ের পথে বিশেষ বিমান
ভারতে আজ থেকে টিকা প্রয়োগ শুরু
ভারতে উৎপাদিত করোনার টিকা সবার আগে পেতে যাচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। এরই মধ্যে বিশেষ একটি বিমান ব্রাজিল থেকে মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। বিমানটি ২০ লাখ টিকা নিয়ে চলতি সপ্তাহেই ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরে পৌঁছানোর কথা।
আজ শনিবার থেকে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হচ্ছে ভারতে। মূলত এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরই ব্রাজিলকে টিকার চালানটি দেবে ভারত। এদিকে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৯ কোটি ৩৫ লাখের বেশি।
ভারতে অক্সফোর্ডের টিকা উত্পাদন করছে ‘সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া’ (এসআইআই)। মূলত তাদের উত্পাদিত টিকাই ব্রাজিলকে দেওয়া হচ্ছে। ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এদুয়ার্দো পাজুয়েলোর উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এয়ারবাস এ৩৩০নিও’ বিমানটি গতকাল শুক্রবার মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। ১৫ ঘণ্টার ফ্লাইট শেষে বিমানটি মুম্বাইয়ে পৌঁছবে আজ শনিবার। বিমানটি টিকা নিয়ে কবে ফিরবে, তা নিশ্চিত করেনি মন্ত্রণালয়। প্রথমে বলা হয়েছিল, শনিবারের (আজ) মধ্যেই বিমানটি টিকা নিয়ে ফিরবে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় জানায়, বিমানটি কবে ফিরবে, সেই দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ব্রাজিলে টিকা রপ্তানির ব্যাপারে সেরামের বক্তব্য জানতে বার্তা পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ। তবে প্রতিষ্ঠানটি কোনো সাড়া দেয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’কে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘অন্যান্য দেশে টিকা পাঠানোর বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
‘দ্য প্রিন্ট’ জানায়, টিকা পেতে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো। এরপর চলতি মাসের শুরুতে মোদি সরকারের সঙ্গে ব্রাজিলের একটি চুক্তি চূড়ান্ত হয়। ওই চুক্তির অধীনেই ‘বিশেষ মূল্যে’ টিকা পেতে যাচ্ছে ব্রাজিল। একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে ‘দ্য প্রিন্ট’ আরো জানায়, ভারতে টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরই ব্রাজিলের বিমানটি টিকা নিয়ে রওনা হবে। কারণ মোদি সরকার ভারতের আগে অন্য দেশকে প্রাধান্য দেবে না। এ বিষয়ে সেরামের বক্তব্য জানতে বার্তা পাঠিয়েছিল ‘দ্য প্রিন্ট’ও। কিন্তু তারাও কোনো সাড়া পায়নি।
ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘উত্পাদিত সব টিকা সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। ফলে বাড়তি টিকা অন্য দেশে রপ্তানি করলে ভারতের টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হবে না।’
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, আজুল ব্রাজিলিয়ান এয়ারলাইনসের বিশেষ বিমানটিতে টিকা সংরক্ষণের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এই টিকা রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দুই দেশের কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলেও জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
মৃত্যু ২০ লাখ ছাড়াল
বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চলে শনাক্ত কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৯ কোটি ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গত শনিবার আক্রান্ত হয় সাত লাখ ৫৯ হাজার ৬৮৮ জন।
মৃতের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় ১৫ হাজার ৫১২ জনের। সেরে ওঠার সংখ্যাও কম নয়; ছয় কোটি ৭০ লাখের বেশি। চিকিৎসাধীন আছে প্রায় দুই কোটি ৪৬ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ রয়েছে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষের (৯৯.৫ শতাংশ)।
বাকিদের (০.৫ শতাংশ) অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিশ্বে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ১৩ জন। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ৩ শতাংশ। সূত্র : দ্য প্রিন্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ব্লুমবার্গ।