তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় সব হিমবাহ দ্রুতগতিতে গলছে। চলতি শতকেই এক-পঞ্চমাংশের বেশি বৈশ্বিক সমুদ্রস্তর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে হিমবাহ গলা পানি। গত বুধবার আন্তর্জাতিক গবেষকদের করা গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
গবেষকেরা বলেছেন, বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে হিমবাহ গলার হার বাড়তে শুরু করে। তবে এখন পর্যন্ত বরফ গলে যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আন্তর্জাতিক গবেষকদের দলটি প্রথমবারের মতো গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তর বাদে পৃথিবীর ২ লাখ ২০ হাজার হিমবাহ পর্যবেক্ষণ করেছেন। গত দুই দশকে হিমবাহ গলার সঠিক হার মূল্যায়ন করতে তাঁরা এ গবেষণা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার টেরা কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বের হিমবাহগুলো গড়ে প্রতিবছর ২৬৭ বিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে। এতে যে পরিমাণ পানি সমুদ্রে মিশেছে, তা প্রতিবছর সুইজারল্যান্ডকে ৬ মিটার পানির নিচে ডুবিয়ে ফেলতে পারে।
ওই সময়ের মধ্যে হিমবাহ গলার হারও বেড়েছে বলে দেখেছেন গবেষকেরা। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে হিমবাহ থেকে গড়ে প্রতিবছর ২৯৮ বিলিয়ন টন বরফ গলেছে। সমুদ্রে পানির স্তর বৃদ্ধিতে হিমবাহ গলার বিষয়টি ২১ শতাংশ ভূমিকা রেখেছে।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, হিমবাহ গলে যাওয়ার গতি গত দুই দশকে দ্বিগুণ হয়েছে। আগে যা ধারণা করা হচ্ছিল তার চেয়ে এই হার অনেকটাই বেশি। গবেষকেরা বলেছেন, হিমবাহ গলে যাওয়ার বা হিমবাহের ভর হ্রাসের নিখুঁত হিসাব বের করা কঠিন। কারণ, হিমবাহ প্রত্যন্ত ও সহজে পৌঁছানো যায় না এমন স্থানে পাওয়া যায়। এর অর্থ বিশ্বের ২ লাখের বেশি হিমবাহের মধ্যে মাত্র কয়েক শ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
নাসার ডেটাসেট ব্যবহার করে গবেষকেরা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন, হিমবাহগুলোর ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৫ হাজার ৭৩ গিগাটনের (১০০ কোটি টনে ১ গিগাটন) বেশি ভর কমেছে। এটি ৫৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩৪৬টি আইফেল টাওয়ারের সমান।
গবেষণা প্রবন্ধে লেখকেরা লিখেছেন, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হিমবাহ গলার হার প্রতিবছরে দশমিক ৩৬ মিটার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ সময়ে হিমবাহ গলার হার দশমিক ৬৯ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। এর ফলে ওই সময়ের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ক্ষেত্রে হিমবাহ গলে যাওয়ার বিষয়টি ২১ শতাংশ ভূমিকা রেখেছে, যা এক ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগ।
গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে নেচার সাময়িকীতে। গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, সবচেয়ে দ্রুতগতিতে হিমবাহ গলছে আলাস্কা, পশ্চিম কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে। নিউজিল্যান্ডে গত শতকের তুলনায় ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে হিমবাহ গলার হার ৭ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে দ্রুতগতিতে গলা হিমবাহগুলো আলাস্কা ও আল্পসে অবস্থিত। গবেষকেরা পামির পর্বত, হিন্দুকুশ ও হিমালয়ের হিমবাহগুলো ধরে রাখা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব রয়েছে হিমবাহ গলার ক্ষেত্রে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম মূল নির্দেশক। গবেষকেরা যদিও হিমবাহ গলার কারণ নিয়ে গবেষণা করেননি, তবে তাঁরা ওই অঞ্চলে তাপমাত্রা পরিবর্তনের বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন।