আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুই দশক পর এসে মার্কিন সেনারা দেশটির সবচেয়ে বড় বাগরাম বিমানঘাঁটি ত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই বাগরাম ঘাঁটির নিরাপত্তায় দায়িত্বরত আফগান কমান্ডার বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কাউকে কিছু না বলে রাতের অন্ধকারে বাগরাম বিমানঘাঁটি ছেড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।
মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ার পর বাগরাম ঘাঁটিতে থাকা একটি কারাগারে বন্দী পাঁচ হাজারের বেশি তালেবান চলে গেছেন বলে খবর বেরিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাগরাম ছিল পশ্চিমা সেনাদের অন্যতম প্রধান ও শক্তিশালী ঘাঁটি। এই ঘাঁটি থেকে রাতের বেলা কাউকে কিছু না জানিয়ে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের অভিযোগ করেছেন আফগান কমান্ডার জেনারেল আসাদুল্লাহ কোহিস্তানি। যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা চলে যাওয়ার পর বাগরাম ঘাঁটির নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
বিবিসিকে আসাদুল্লাহ জানান, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটায় মার্কিন সেনারা বাগরাম ছেড়ে যান। তাঁরা আফগান বাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করেননি। মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আফগান সেনারা সেটি বুঝতে পারেন। তখন বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয় আফগানরা।
এই ঘাঁটিতে একটি কারাগার রয়েছে। মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ার পর সেখান থেকে পাঁচ হাজারের বেশি তালেবান বন্দী চলে গেছেন। গতকাল সোমবার জেনারেল আসাদুল্লাহ আশঙ্কা প্রকাশ করে বিবিসিকে বলেন, তালেবানরা বাগরাম ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে।
জেনারেল আসাদুল্লাহ আরও বলেন, ‘তালেবানরা আশপাশের গ্রামগুলোয় জড়ো হতে শুরু করেছে। মার্কিন সেনাদের সঙ্গে আফগান সেনাদের তফাত রয়েছে। সীমিত সক্ষমতা নিয়েই আমরা নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব।
গত শুক্রবার বাগরাম ঘাঁটি ছাড়েন মার্কিন সেনারা। ওই ঘাঁটিতে আর বিদেশি কোনো সেনা নেই। চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা আগেই ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর আগেই আগামী আগস্টের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান ছাড়বেন যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনাসদস্য।
মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করায় দেশটিতে তালেবানরা আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। হামলার ঘটনা বেড়েছে। নতুন নতুন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে তালেবানরা। মার্কিন সেনাদের বাগরাম ছাড়ার দুদিনের মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কান্দাহারের পাঞ্জওয়াই জেলার দখল নিয়েছে তালেবান গোষ্ঠী। এ ছাড়া দেশটির বেশ কয়েকটি প্রদেশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবান বাহিনীর লড়াই চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা সেনাদের প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। ফলে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কূটনৈতিক মিশন রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার সেনা আফগানিস্তানে রয়ে যেতে পারে বলেও খবর মিলেছে। এমন খবরের প্রতিক্রিয়ায় হুঁশিয়ারি দিয়ে তালেবান বলেছে, এরপরও যদি কোনো বিদেশি সেনা আফগানিস্তানে থেকে যায়, তবে তা দখলদারদের জন্য ঝুঁকির কারণ হবে।