বলিউডের কিংবদন্তি দিলীপ কুমার ছিলেন অলরাউন্ডার অভিনেতা। রোমান্টিক কিংবা ট্র্যাজিক অথবা অ্যাকশন- সব চরিত্রেই সাবলীলভাবে অভিনয় করার দক্ষতা ছিল এই বলিউড আজমের। তাঁর এই অনন্য ক্যারিশমায় মুগ্ধ ছিলেন হিন্দি সিনেমার স্বর্ণালি যুগের বিখ্যাত নায়িকা নার্গিস, মধুবালা, নিম্মি, বৈজয়ন্তীমালা, মীনা কুমারী, ওয়াহিদা রেহমান। সবাই দিলীপ কুমারের বিপরীতে অভিনয় করার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। দিলীপ কুমারের নায়িকাদের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদমধুবালা
দিলীপ কুমারের নায়িকা হিসেবে সবচেয়ে বেশি দর্শক দৃষ্টি কাড়েন মধুবালা। ১৯৫১ সালে ‘তারানা’ ছবিতে প্রথম পর্দা জুটি বাঁধেন তাঁরা। প্রথম ছবিতেই তাঁদের পর্দা রসায়ন দর্শকের মনে ধরে। তারানা ছবির শুটিং সেটে গিয়ে দুজনের প্রথম পরিচয়। এরপর সাঙ্গদিল, অমর, মুঘল-ই-আজমের জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করে দর্শক মাতিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। বিশেষ করে মুঘল-ই-আজম ছবিতে সেলিমরূপী দিলীপ কুমার আর আনারকলি চরিত্রে মধুবালার অনবদ্য পর্দা প্রেম এখনো দর্শকদের হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়। এই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে বাস্তব জীবনেও তাঁরা প্রেমের বাঁধনে জড়ান। যদিও এই প্রেম শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা পায়নি।
দিলীপ কুমার-বৈজয়ন্তীমালা
বৈজয়ন্তীমালা
মধুবালার পর বৈজয়ন্তীমালা-দিলীপ কুমার জুটি দর্শকমন কাড়ে। সাতটি ছবিতে জুটি হয়ে কাজ করেছেন তাঁরা। সেগুলো হলো- দেবদাস (১৯৫৫), নয়া দৌড় (১৯৫৭), মধুমতি (১৯৫৮), পয়গাম (১৯৫৯), গঙ্গা যমুনা (১৯৬১), নেতা (১৯৬৪), এবং সংঘর্ষ (১৯৬৮)। অনেকেই বলে থাকেন বৈজয়ন্তীমালার সঙ্গে দিলীপ কুমারের জুটি বেশি সুপারহিট ছিল। সিনেমার পাশাপাশি বাস্তবেও দুজনের প্রেম ছিল বলে শোনা যায়। দুই তারকাই বরাবর সেই সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। স্ক্যান্ডাল-গুজব নিয়ে বৈজয়ন্তীমালার পরিবারে ঝামেলাও তৈরি হয়। যার কারণে দিলীপ কুমারের সঙ্গে ছবি করাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি।
দিলীপ কুমার-সুচিত্রা
সুচিত্রা সেন
কলকাতার মহানায়িকা সুচিত্রা সেনও জুটি বেঁধেছিলেন বলিউড মুঘল দিলীপ কুমারের সঙ্গে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা বিমল রায় ১৯৫৫ সালে নির্মাণ করেন অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘দেবদাস’ অবলম্বনে একই শিরোনামের ছবিটি। এতে দেবদাস চরিত্রে দিলীপ কুমার আর পার্বতী চরিত্রে সুচিত্রা সেন অসাধারণ অভিনয় করে শুধু ছবিটিকে নয়, তাঁরাও কালজয়ী জুটিতে পরিণত হন। যদিও কলকাতায় ব্যস্ত থাকার কারণে সুচিত্রার পক্ষে দিলীপ কুমারের সঙ্গে আর অভিনয় করা সম্ভব হয়নি।
দিলীপ কুমার-নার্গিস
নার্গিস
নার্গিস সাতটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমারের সঙ্গে। ১৯৪৮ সালের ‘আনোখা পেয়ার’ দিয়ে প্রথম বড় পর্দায় অভিষেক দিলীপ-নার্গিসের। দিদার, মেলা, আন্দাজ, বাবুলের মতো জনপ্রিয় অনেক ছবিই উপহার দিয়েছে এই জুটি। প্রতিটি সিনেমায় দুজনের সাবলীল অভিনয় উপভোগ করেছেন ভক্তরা। একসময় তাঁদের প্রেমের গুঞ্জন চাউর হয়েছিল। তবে সেই প্রেম নিয়ে মুখ খুলেননি কেউই।
দিলীপ কুমার-সায়রা বানু
সায়রা বানু
জীবনের দুটি স্বপ্ন ছিল সায়রা বানুর। একটি অভিনেত্রী হওয়া অন্যটি দিলীপ কুমারকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া। ভাগ্য সহায়ক ছিল সায়রার। দুটো স্বপ্নই পূর্ণতা পায় তাঁর। ২২ বছরের সায়রাকে যখন বিয়ে করেন দিলীপ তখন তাঁর বয়স ৪৪। বিয়ের পর এই জুটি গোপি, সাগিনা মাহাতো, রাম আওর শামের মতো জনপ্রিয় ছবিগুলো উপহার দেয়।
দিলীপ কুমার-মীনা কুমারী
মীনা কুমারী
১৯৫৫ সালে ‘আজাদ’ ছবিতে প্রথম জুটি বেঁধে অভিনয় করেন দিলীপ কুমার ও মীনা কুমারী। ছবিটির অনবদ্য সাফল্য এই জুটিকে সফলতার তখতে বসিয়ে দেয়। যদিও মীনা কুমারীর অসুস্থতা এবং অকাল মৃত্যুর কারণে দুজনের বেশি ছবি করা হয়নি। এই জুটির বড় পর্দায় দেখা মেলে আরও তিনটি ছবিতে। এগুলো হলো- ‘কোহিনুর’, ‘ফুটপাথ’ এবং ‘ইহুদি’। বলিউডের আকাশে-বাতাসে উড়েছিল এই জুটিরও প্রেমকাহিনি।
কামিনী কুশল
বলিউডের জনপ্রিয় এই জুটির যাত্রা শুরু ১৯৪৭ সালের ‘শহীদ’ ছবি দিয়ে। প্রথম ছবিতেই সুন্দরী কামিনীর প্রেমে পড়েন তরুণ দিলীপ কুমার। তবে বিবাহিত থাকার কারণে দিলীপের প্রেম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন কামিনী। দুজনেরই প্রেমকাহিনি নিয়ে অনেকবারই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন দিলীপ। স্ক্যান্ডালে বিরক্ত হয়ে ভেঙে যায় জুটিটি। ১৯৪৮ সালে ‘শবনম’ ছবি দিয়ে ইতি টানেন দিলীপ-কামিনীর পর্দা রসায়ন।