নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা
করোনার প্রাদুর্ভাবের দ্বিতীয় ঢেউয়ের থাবা পড়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন দেশের একমাত্র টানেলের কাজের গতিতে। বৈশি^ক প্রাদুর্ভাবের মধ্যে নানান প্রতিকূলতার কারণে গত সাত মাসে সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১০ শতাংশ। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টানেল নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ বিঘ্ন, শ্রমিক সংকটসহ নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক গতিতে চলছে না টানেল নির্মাণের কাজ। লকডাউন শিথিল হলে বাড়বে কাজের গতি। তখন কাজের গতি বাড়িয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত সাত মাসে কাজের গতি স্লথ হয়ে গেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ছিল ৬১ শতাংশ। জুলাই পর্যন্ত তা বেড়ে সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭১ শতাংশ। এ সাত মাসে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। কাজের গতি বাড়ানো না গেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ হবে না। জানা যায়, গত বছর করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টানেল নির্মাণের কাজের গতি স্বাভাবিক রাখা হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে লকডাউনের কারণে স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে শ্রমিক কর্মকর্তারা কাজে যোগদান করতে না পারায়, নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের বিঘ্নসহ নানান কারণে হঠাৎ থমকে যায় কাজের গতি। গত মে থেকে প্রতি মাসে গড়ে সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। আনোয়ারা প্রান্তের সংযোগ সড়কের ওভার ব্রিজ ও সড়ক সম্প্রসারণের কাজ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ চলছে স্লথ গতিতে। তবে সার্বিক কাজের খুব একটা অগ্রগতি না হলেও তুলনামূলকভাবে ভালোভাবেই চলছে নদীর তলদেশের টানেল তৈরির কাজ। এরই মধ্যে প্রথম টানেলে যান চলাচলের উপযোগী হয়েছে ১৩৫০ মিটার। ২৪৫০ মিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় টানেলটির খনন হয়েছে ১৯৭০ মিটার। চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’র আদলে কর্ণফুলী নদীতে তৈরি হচ্ছে টানেল। মেগা এ প্রকল্পের এক প্রান্তে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্র বন্দর। অপর প্রান্তে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। বিভক্ত দুই অংশকে সাংহাইয়ের আদলে একই সুতোয় যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের যৌথ অর্থায়ন করছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এটি পুরোদমে চালু হলে প্রতি বছর প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্পকারখানা ও পর্যটন শিল্পের।