সিলেটের জকিগঞ্জের এই গ্যাসক্ষেত্রে ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন যোগ্য
সিলেটের জকিগঞ্জে দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সিলেটের জকিগঞ্জে দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রে মোট মজুদ ৬৮ বিলিয়ন ঘনফুট, উত্তোলনযোগ্য মজুদ ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট। এখান থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন করে যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। আর ১০ থেকে ১২ বছর গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হবে। যার দাম ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, গত ১ মার্চ এখানে কূপ খনন শুরু করে বাপেক্স। ৭ মে কূপ খনন শেষ হয়। গত ১৫ জুন ডিএসটি (ড্রিল স্টিম টেস্ট) গ্যাসের শিখা জ্বালাতে সক্ষম হয় রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটি। কূপটির অভ্যন্তরে চাপ রয়েছে ৬ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) আর ফ্লোটিং চাপ রয়েছে ১৩ হাজারের অধিক। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গতকাল জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসে জকিগঞ্জকে দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা কর হয়? বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের ক্ষণে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে খুবই স্বস্তির খবর। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নতুন গ্যাসক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, পাইপলাইন নির্মাণ হলে সবকিছু মিলিয়ে গ্যাস উত্তোলনে আরও দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। বাপেক্স সিলেট গ্যাসফিল্ডে আরও ১০টি ড্রিলিংয়ের প্রস্তুতি নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সিসমিক সার্ভে ও নতুন করে ড্রিলিংয়ের কাজ শুরু করা হবে। নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়ায় আবাসিক খাতে গ্যাস দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বাড়ির চেয়ে শিল্পকে গ্যাস দিতে চাই। এটা হলো আমাদের মেইন পারপাস। বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, এটি বাপেক্সের অষ্টম সাফল্য। এই কূপে চারটি স্তরে পরীক্ষা করে একটি স্তরে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস পাওয়া গেছে। মাটির ২৮৭০ থেকে ২৮৯০ মিটার গভীরে এই গ্যাস স্তর অবস্থিত। এই কূপ খননে বাজেট ছিল ৮৬ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৭১ কোটি টাকা। নতুন এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বিয়ানীবাজার ও ৪৬ কিলোমিটার দূরে কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্র অবস্থিত। জকিগঞ্জ থেকে বিয়ানীবাজার বা কৈলাসটিলা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণের পর জাতীয় গ্রিডে নতুন গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস দেওয়া সম্ভব হবে। বাপেক্স এমডি জানান, এই গ্যাসক্ষেত্রে সামনের শুষ্ক মৌসুমে টুডি থ্রিডি সিসমিক সার্ভে চালানো হবে। এরপর পুরো গ্যাসক্ষেত্রের পূর্ণাঙ্গ আকার কাঠামো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। যার ওপর ভিত্তি করে নতুন কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ, আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রমাণিত মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ, আর সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে ৭ টিএসএফের মতো। দেশের ১১৩টি কূপ দিয়ে প্রতি বছরে উত্তোলিত হচ্ছে প্রায় ১ টিসিএফের মতো গ্যাস। এর মধ্যে দেশীয় কোম্পানির ৭০টি কূপের (দৈনিক) ১ হাজার ১৪৫ এমএমসিএফডি, আইওসির ৪৫টি কূপের উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার ৬১৫ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন ঘনফুট)। দৈনিক কমবেশি ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে।