সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে
আজ বুধবার থেকে বিধিনিষেধ শিথিল সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছে সরকার। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস, ব্যাংক ও শিল্প-কারখানা আগামীকাল থেকে খোলা যাবে; চালু করা যাবে গণপরিবহণ। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে সব আসনেই যাত্রী বহন করা যাবে। একইসঙ্গে শর্ত মেনে শপিংমল, মার্কেট ও দোকানপাট, খাবার দোকান, হোটেল ও রেস্তোরাঁ খোলা রাখা যাবে। সব ক্ষেত্রে যাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হয়, তেমন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বস্তুত দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করব, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন। দুঃখজনক হল, অনেকেই মনে করেন, যেহেতু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে; সেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের দরকার নেই। শুধু তাই নয়, কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকার সময়ও অলিগলিতে বহু মানুষকে অপ্রয়োজনে এখানে-সেখানে ভিড় করতে দেখা গেছে। কাজেই বিধিনিষেধ শিথিল করার পর দেশের করোনা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। জানা গেছে, বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের শৈথিল্য প্রদর্শনের কারণে অল্প সময়ের ব্যবধানে পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা প্রবল। জনবহুল এ দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে তা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। এখনো অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীন। এ বাস্তবতায় বিধিনিষেধ শিথিল করার পরও দেশে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যা বলাই বাহুল্য। বিধিনিষেধ শিথিল করার পর স্থল ও জলপথে যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রে যে ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে, তা বিবেচেনায় রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অতীতে লক্ষ করা গেছে, বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন শপিংমল, মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ক্ষেত্রে কোনো কোনো আধুনিক শপিংমল দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার বিষয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু কিছু বিক্রেতা, বিশেষ করে হকাররা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সক্ষমতা অর্জন করতে পারছে না, যা ইতোমধ্যে আলোচনায়ও এসেছে। বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রেক্ষাপটে আরও যেসব বিষয় করোনা পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে তাও ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে। এক্ষেত্রে নিত্যপণ্যের ছোট-বড় হাটবাজারে ভিড় করার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালেও অলিগলিতে নিত্যপণ্যের কোনো কোনো দোকান কৌশলে খোলা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও যাতে সরকারি নির্দেশনার সঠিক বার্তা পায় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং করোনা নিয়ন্ত্রণে তারা কী ভূমিকা রাখতে পারে তাও তাদের সামনে স্পষ্ট করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পর করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ল্যামডার সংক্রমণের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই জীবিকার প্রয়োজনে ভুল বা উদাসীনতার কারণে করোনা পরিস্থিতির কতটা অবনতি হতে পারে, এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করতে হবে। একইসঙ্গে দেশে টিকা কার্যক্রম জোরদার করা না গেলে করোনা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করা যাবে কিনা এ বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়।