সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিয়মিতই দিতে হবে : জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯’ অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার কথা। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের তেমন কোনো তদারকি নেই। ফলে অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এ নিয়ম মানছেন না। এমতাবস্থায় সরকারি চাকুরেদের (কর্মকর্তা-কর্মচারী) সম্পদের হিসাব নিতে আরও কঠোর হতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এখন থেকে বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী নিয়মিতভাবেই তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে।
এ বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঁচ বছর পর পর সম্পদের বিবরণী দাখিলের নিয়ম আছে। এতদিন সেভাবে হয়তো মানা হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা আর ছাড় দেব না। বিধিমালাটি কার্যকরের মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী দাখিল ও স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির নিয়ম মানতে ইতিমধ্যে সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সম্পদের হিসাব এখন নিয়মিতভাবেই দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে একটা প্রেসার তৈরি হয়েছে। তাদের আয়করের মতো প্রতি পাঁচ বছর পরপর হিসাব দিতে হবে।’ সম্পদের হিসাব নিতে নতুন কোনো আইন প্রণয়নের বিষয়টিও নাকচ করেন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। জানা গেছে, সরকারি চাকুরেদের সম্পদের হিসাব দিতে গত ২৪ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯’-এর বিধি ১১, ১২ ও ১৩-তে সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর সম্পত্তি অর্জন, বিক্রয় ও সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুশাসন নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী উল্লিখিত বিধি কার্যকরভাবে কর্মকর্তাদের অনুসরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে জোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এমতাবস্থায় ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’-এর আওতাভুক্তদের তাদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/দফতর/অধীনস্থ সংস্থায় কর্মরত সব সরকারি কর্মকর্তার সম্পদ বিবরণী দাখিল, ওই সম্পদ বিবরণীর ডাটাবেজ তৈরি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে স্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও বিক্রয়ের অনুমতি গ্রহণের বিষয়ে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯’-এর ১১, ১২ এবং ১৩ বিধি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য বলা হলো। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীর জমি/বাড়ি/ফ্ল্যাট/সম্পত্তি ক্রয় বা অর্জন ও বিক্রির অনুমতির জন্য আবেদনপত্রের নমুনা ফরম এবং বিদ্যমান সম্পদ বিবরণী দাখিলের ছকও চিঠির সঙ্গে পাঠানো হয়।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের কাছে সম্পদের হিসাব জমা দেবেন। প্রতি পাঁচ বছর পর ডিসেম্বর মাসে এ হিসাব জমা দেওয়ার বিধান। কেউ এ নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু এ বিষয়ে যথাযথ মনিটরিং না থাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগই এ নির্দেশনা মানছেন না। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ঘোষণা দিয়েছিলেন- দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ এবং জনবান্ধব ভূমি সেবা দিতে অন্যতম কৌশল হিসেবে মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে। ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সব দফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হওয়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নিতে পারেনি তারা। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সংস্থার ১৭ হাজার ৫৭৬ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে ১৭ হাজার ২০৮ জন সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করেন। বিভাগীয় মামলায় সাময়িক বরখাস্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে থাকার কারণে ৩৬৮ জন কর্মচারী সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে পারেননি। সে সময় ভূমিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এখন থেকে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের কর্মসূচি চলমান থাকবে।’ এ ছাড়া অন্য কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রশাসন বিষয়ক একাধিক বইয়ের রচয়িতা ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি চাকুরেরা প্রতি পাঁচ বছর পর সম্পদের হিসাব না দিলে অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। এ অপরাধে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হতে পারে। ফলে সরকার আন্তরিকভাবে সম্পদের হিসাব চাইলে যে কোনো কর্মচারী এ হিসাব দিতে বাধ্য। নিয়মিত মনিটরিং করে ব্যবস্থা নিলেই সবাই সম্পদের হিসাব দেবেন।