গত আড়াই মাসের বেশী সময় ধরে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের সার্ভার সঠিক সময়ে হালনাগাদ না করায় পাসপোর্ট তৈরির কাজ থমকে গেছে। একটি সার্ভারে এই পাসপোর্ট ছাপানো হতো। জুন মাসে পাসপোর্ট অধিদফতরের এই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সার্ভারের (এমআরপি) ধারণ ক্ষমতা তিন কোটির বেশি সীমা পার হয়। এ কারনে পাসপোর্ট প্রিন্ট বন্ধ। ফলে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, ওমান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, লেবাননসহ সারা বিশ্বে কর্মরত প্রবাসীদের অনেকেরই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আবেদন করে সাড়া পাচ্ছেন না।
পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ভিসার মেয়াদও বাড়াতে পারছেন না। ফলে তাদের সেই দেশে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। আবার পাসপোর্ট না পেয়ে কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করার আবেদনও করতে পারছেন না। কেউ কেউ ছুটিতে দেশে আসতে পারছেন না। রাস্তায় চলাচল থেকে কর্মস্থলেও পড়ছেন ঝামেলায়। উপায়ান্তর না পেয়ে সৌদি আবরে বাংলাদেশ দূতাবাসে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে হাতে লিখে। এই পরিস্থিতিতে একের পর বিভিন্ন দূতাবাস থেকে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রবাসীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে ।
জানা গেছে, বাংলাদেশে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (এমআরপি) কাজ পেয়েছিল মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান আইরিস করপোরেশন। সেখানে তিন কোটি পাসপোর্টের চুক্তি ছিল। সেই তিন কোটি আঙুলের ছাপ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর নতুন করে পাসপোর্ট ছাপা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সার্ভারের ত্রুটির কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট সেবা সাময়িক বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সেখানকার হাইকমিশন। সংকট সমাধানে পুনরায় আইরিস করপোরেশনের সঙ্গে আরও ৬০ লাখ এমআরপির বিষয়ে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। ফলে গত জুন মাস থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবদেশেই পাসপোর্ট সেবা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগের শিকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। নবায়নের জন্য দুতাবাসে জমা দিয়ে দুই-তিন মাসেও তারা পাসপোর্ট পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করায় দূতাবাসগুলোর পক্ষ থেকেই প্রবাসীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী বলেন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ব্যবস্থাকে আপগ্রেড করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার সঙ্গে আমাদের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। সার্ভার আপগ্রেড হওয়ার পর জমা থাকা আবেদনপত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্ট ছাপানো হবে। তিনি বলেন, আমাদের এমআরপি পাসপোর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ই-পাসপোর্ট চালু করতে পারিনি বিধায় এমআরপি চালাতে হচ্ছে। এটা তো জোড়াতালি দিয়ে চালাচ্ছি। অনেক কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই অতিরিক্ত সবকিছু বাড়াতে হবে। পাসপোর্ট আমরা ইতোমধ্যে কিনে ফেলেছি, মেইনটেন্যান্স কন্ট্রাক্টও বাড়িয়ে ফেলছি। এটার যেসব জিনিস লাগে জার্মানি থেকে সেগুলো কিনেছি।
এ অবস্থায় সৌদি আরবে সমস্যাটা বেশী, কারন সেখানে সর্বাধিক বাংলাদেশী কাজ করেন। গত ২৮ জুন লেবাননের বৈরুতে দূতাবাসে প্রবাসীদের উদ্দেশে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পাসপোর্ট সার্ভারে সাময়িক সমস্যার কারণে দূতাবাসে যেসব পাসপোর্ট নবায়নের জন্য জমা দেওয়া হয়েছিল, সেসব পাসপোর্ট প্রস্তুত বিলম্ব হবে।
গত ১১ জুলাই কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্ট সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে সব প্রবাসী ২২ মে থেকে আবেদন জমা দিয়েছেন, তাদের পাসপোর্ট বিতরণ সার্ভারের ত্রুটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। গত ৭ আগস্ট মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্ভারের ধারণ ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। যার কারণে পাসপোর্টের আবেদন পাইপলাইনে জমা আছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস গত ৬ আগস্ট, মালদ্বীপে বাংলাদেশ হাইকমিশন ৯ আগস্ট, গত ৫ আগস্ট জাপানের দুতাবাস এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেয়।
এদিকে আমেরিকায় পাসপোর্ট ইস্যু সংকট সমাধান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রক্রিয়াকৃত ১৩৬৪ টি আবেদনের বিপরীতে ইতোমধ্যেই ১১০১টি পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়েছে। প্রস্তুতকৃত এসব পাসপোর্ট অনতিবিলম্বে ফেডেক্সের মাধ্যমে দূতাবাসে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।