ভারত থেকে দেশে কাঁচা মরিচ আসছে প্রতি কেজি ৫০ রুপিতে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর দাম পড়ছে ৬৫ টাকার মতো। সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রতি কেজিতে ২২ টাকা শুল্ককর। প্রতি কেজিতে ফড়িয়াদের পেছনে খরচ হচ্ছে ৩ টাকা। বেনাপোল, সোনামসজিদ—এসব স্থলবন্দর থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে আসতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে আরও ১০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি ভারতীয় কাঁচা মরিচের দাম পড়ছে ১০০ টাকা। এ হিসাব গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের।
অথচ ঢাকার খুচরা বাজারে গতকাল দুপুরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা কেজি দরে। গতকাল সন্ধায় অবশ্য দর একটু কমে ২০০ টাকা কেজি হয়। কারওয়ান বাজারের খুচরা পর্যায়ের কাঁচা পণ্যের দোকানি আমির হোসেন এর আগে গত বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এক কেজি নিলে ১২০ টাকা রাখা যাবে।’ গতকাল তিনি দোকান বসাননি। আরেক দোকানি মোহাম্মদ জুয়েল গত রাতে বলেন, ‘বুধবার আমিও ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। আজ কারওয়ান বাজারে এসেছে এক গাড়ি। অন্য সময় আসে সাত গাড়ি। এ জন্য দাম বেড়েছে।’ অথচ এক মাস আগেও দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
প্রায় এক হাজার টন ভারত থেকে এসেছে। আরও এলসি খোলা হচ্ছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে দাম কমতে পারে।
তবে ৬৫ টাকার কাঁচা মরিচ সব ধরনের খরচসহ ১০০ টাকা হলে খুচরা বাজারে তা ২০০ টাকা দরে কেন বিক্রি হবে, তা মানতে পারছেন না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সাময়িক সময়ের জন্য কাঁচা মরিচের দাম বেঁধে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।’
দেশের বাজারে দ্রুত কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং দায়ী বলে মনে করছেন কাঁচা মরিচ আমদানিকারকেরা। হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি হারুন উর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছর কোন সময়ে কাঁচা মরিচের ঘাটতি থাকে তা আমরা জানি। ১৫ দিন আগে আমদানি অনুমোদন (আইপি) চাইলে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং এই অনুমোদন দেয়নি।’ এর কারণ হিসেবে তিনি ঘুষ দিতে না পারার কথা বলেন।
কেন সংকট
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে কাঁচা মরিচ উৎপাদনের দুটি মৌসুম রয়েছে। একটি ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর। আরেকটি ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ। আর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে চারা তৈরির জন্য বীজ রোপণের সময়। অতি বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচের বীজতলা নষ্ট হয়েছে এবার। এ কারণে ফলন কম হয়েছে পণ্যটির। ফলে দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ওই ঘাটতি পূরণের জন্যই ভারত থেকে আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ১০ আগস্ট পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৯০০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির। দুই দিনে এসেছে প্রায় এক হাজার টন।
অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে কাঁচা বাজার করতে আসা ব্যাংকার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কারওয়ান বাজারে এই প্রতিবেদকের কথা হয় গতকাল। তিনি বলছিলেন, ‘এক দিনের ব্যবধানে একটা পণ্যের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা যখন বেড়ে যায়, তখন এমন বিশ্বাসই মনে আসে যে এগুলো তদারক করার কোনো ব্যবস্থা নেই দেশে।’
এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম যখন ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, তখনই পণ্যটি ভারত থেকে আনার ব্যাপারে মনোযোগী হন আমদানিকারকেরা। ভারত থেকে হিলি, বেনাপোল, সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আসছে এসব কাঁচামরিচ। বেশি আসছে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে। প্রতিদিনই ঋণপত্র (এলসি) খোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয় যেসব নিত্যপণ্য নিয়ে কাজ করে, তার মধ্যে কাঁচা মরিচ পড়ে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এটি দেখে। তবে যে প্রবেশমুখগুলো দিয়ে পণ্যটি আমদানি হচ্ছে, সেগুলো দিয়ে যাতে ঝামেলাহীনভাবে আসতে পারে, তা আমরা তদারক করছি।’
কত আমদানি হচ্ছে
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১০ ও ১১ আগস্ট দুই দিনে ভারত থেকে আমদানি হয়ে কাঁচা মরিচ এসেছে প্রায় এক হাজার টন। আরও আসার অপেক্ষায় রয়েছে। ভারতীয় কাঁচা মরিচ দেশে ঢোকার পর বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছিল। গত বুধবার পর্যন্ত দাম কমেও এসেছিল কিছুটা। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই আবার তা বেড়ে গেল।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, ‘কাঁচা মরিচ নিয়ে বুধবার হিলি স্থলবন্দরের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমদানি পর্যায়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আশা করা যায়, খুচরা বাজারেও দাম কমে আসবে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে। এখন স্থলবন্দর থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত গাড়ি আসছে কি না, না এলে কেন আসছে না, কেউ দাম বৃদ্ধির অংশ হিসেবে মজুত করছে কি না, সেগুলো একটু দেখার বিষয় রয়েছে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ভারত থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান কাঁচা মরিচ আমদানি করছে, সেগুলো হচ্ছে জোবায়ের এন্টারপ্রাইজ, উৎস এন্টারপ্রাইজ, গাজী এন্টারপ্রাইজ ও রুসদ এন্টারপ্রাইজ, বিএইচ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ ও সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ। এদিকে বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ পচনশীল পণ্য হওয়ায় রাজস্ব আদায় করে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।