মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ার পর তালেবানরা দেশটির ক্ষমতায় আসবে এমনটা সবাই স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছিল। কিন্তু এতটা ঝড়ের বেগে একের পর এক প্রদেশ দখল করে দ্রুত কাবুলও জয় করে ফেলবে তা ছিল ধারণাতীত। গোটা বিশ্বকে চমকে দেওয়া তালেবানদের নিয়ে তাই বিশ্ব মিডিয়ায় নানা খবর প্রকাশ হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মিডিয়াও এসব খবর নানা আঙিকে প্রকাশ করেছে।
‘রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ দখল তালিবানের, মানবে না কোনও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ শিরোনামে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, ঘানির বিরুদ্ধে রীতিমতো ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে তুমুল আক্রমণ করেছেন আফগানিস্তানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মাদি। তিনি বলেন, ‘ওঁরা আমাদের হাত পিছন থেকে বেঁধে দিয়েছেন এবং দেশকে বেচে দিয়েছেন। ঘানি ও তাঁর গ্যাংকে অভিশাপ দিন।’ কার্যত একইসুরে ঘানিকে বিঁধেছেন আফগান সরকারের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ঈশ্বর যেন তাঁকে দোষী বলে বিবেচনা করেন।’
হিন্দুস্তান টাইমসের আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল-‘তালিবানের ক্ষমতা দখল সময়ের অপেক্ষা, আগেই দেশ ছেড়ে পালালেন আফগান রাষ্ট্রপতি’। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কাবুলের শহরতলিতে তালেবানরা পৌঁছানোর পর সরকারি অফিসগুলি থেকে সরকারি কর্মচারীরা পালাতে শুরু করেছেন। এদিকে বহু স্থানে আফগান কমান্ডাররা আত্মসমর্পণ করেছে।’
‘তালিবানি হামলার মুখে পালাচ্ছে মানুষ, আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে পারে ভারত’ শিরোনামে আরেকটি খবর প্রকাশ করে হিন্দুস্তান টাইমস।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতায় চলে এলে তালিবান কীভাবে সরকার চালাবে তা নিয়ে চরম সংশয় তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের মনে। এই আবহে আফগান নাগরিকদের আশ্রয় দিতে পারে নয়াদিল্লি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তালিবানি শাসনে নারীর অধিকার বলে কিছু নেই। নাগরিক অধিকারও তারা মানে না। জঙ্গিদের নির্দেশ না মানলেই কপালে জুটবে মৃত্যু। ফের ঘটবে প্রকাশ্যে মুণ্ডচ্ছেদ, পাথর ছুড়ে খুনের মতো ঘটনা। ইতিমধ্যেই ফতোয়া জারি করে বহু জায়গায় বন্ধ করা হয়েছে কোভিড টিকাকরণ। দখল হয়েছে ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
রোববার আফগানিস্তানের কাবুল প্রবেশের পর পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে ‘দীর্ঘতম যুদ্ধ থেকে খালি হাতেই ফিরতে হল মহাশক্তিধর আমেরিকাকে’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
আনন্দবাজার পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কোটি কোটি ডলার খরচ করে, হাজার হাজার জওয়ানের দেহ কফিনবন্দি করে, দেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষ করে খালি হাতেই আফগানিস্তান থেকে ফিরতে হচ্ছে আমেরিকাকে ‘।
আনন্দবাজার পত্রিকার আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম-‘তালিবান-রাজ শুরু হতেই দিল্লি এলেন বেশ কিছু আফগান সাংসদ ও আধিকারিক’।
আনন্দবাজারের আরেকটি সংবাদের শিরোনাম হলো- ‘এক গনিকে সরিয়ে কাবুলের মসনদে কি আর এক গনি?’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, টানটান উত্তেজনায় কেটেছে রাত। সকাল হতেই বিনাযুদ্ধে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গেল আফগানিস্তানে। তালিবান নেতাদের সঙ্গে মাত্র ৪৫ মিনিট বৈঠকের পরেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিলেন আশরফ গনি। তাঁর জায়গায় আর এক গনি এবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে।
জিনিউজ মালালার টুইটকে কেন্দ্র করে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘তালিবানের এই আফগান-দখলে দারুণ বিচলিত নোবেলজয়ী’
জিনিউজের আরেকটি সংবাদ শিরোনাম হলো-‘আফগানিস্তানকে আবারও ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণা’।
জিনিউজ ১৩টি ছবি দিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রকল্প ও উন্নয়নের ছবি দিয়ে ভারতের বিনিয়োগ ও ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
ওই সচিত্র প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘আফগানিস্তানে বাঁধ থেকে সড়ক নির্মাণে ৩ বিলিয়ন ডলার খসিয়েছে ভারত, সবটাই জলে?’
ওই প্রতিবেদনে নরেন্দ্র মোদি ও আশরাফ গনির হাস্যোজ্জ্বল ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার! আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরাতে এই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে নয়াদিল্লি। যে অর্থ দিয়ে তৈরি হয়েছে বাঁধ, রাস্তাঘাট থেকে আফগান সংসদ ভবন। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে কৌশলগত কারণে আফগান-ভূমে প্রভাব বাড়িয়েছিল ভারত। তালিবান ফের ক্ষমতায় উপক্রম হওয়ার পর নয়াদিল্লিকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
হেরাত প্রদেশে ৪২ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, তালিবানি হামলায় ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে একাধিক ভারতীয় কর্মীর মৃত্যু হয়েছে এই বাঁধ নির্মাণে। ২০১৬ সালে ৪২ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎপ্রকল্পের উদ্বোধন হয়। এই বাঁধ এখন তালিবানের নিয়ন্ত্রণে।
আফগানিস্তানের সংসদের ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, কাবুলে ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে সংসদভবন নির্মাণ করেছে ভারত। ২০১৫ সালে সেটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আফগানিস্তানের গণতন্ত্রের প্রতি এটা ভারতের শ্রদ্ধার্ঘ বলে জানান তিনি। সংসদভবনের একটি ব্লকের নামকরণ হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর অটলবিহারী বাজপেয়ীর নামে।