আফগানিস্তানের পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে হটিয়ে দেওয়া তালেবানকে দেশটির বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে চীন। বেইজিং এ বিষয়টি নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের প্রতিবেদনে মার্কিন ও বৈদেশিক গোয়েন্দাদের উদ্বৃত করে এ কথা জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজধানী কাবুলসহ প্রায় পুরো আফগানিস্তান এখন তালেবানের দখলে। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যেই চীনের সম্পর্কে মার্কিন গণমাধ্যমে এমন তথ্য প্রকাশ হলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যখন আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে রাখার হুমকি দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতির রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য তালেবানদের পুনরায় আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে চাইছেন, তখন চীন যদি তালেবানদের স্বীকৃতি দেয় তাহলে এ প্রক্রিয়ায় মারাত্বক ব্যাঘাত ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত থাকা পাকিস্তানের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে চীন। আফগানিস্তানের অনেক নাগরিকই বিশ্বাস করেন, প্রশিক্ষণ শিবির ও আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মাধ্যমে পাকিস্তান অত্যন্ত কৌশলে তালেবানদের সহায়তা করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নিলেও চীনের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের অনেকটাই এখানে ব্যবহার সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে আফগানিস্তানের পরবর্তী শাসকের সঙ্গে সম্পর্ক করা একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে তারা।
র্যান্ডের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক দেরেক গ্রসম্যান বলেছেন, ‘পেশোয়ার-কাবুল মোটরওয়ে নির্মাণে বেইজিং খুব সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এর মাধ্যমে পাকিস্তানকে আফগানিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চীনের বিশাল অবকাঠামো ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশগ্রহীতা হতে পারবে।
এছাড়া ওয়াখান করিডোরের মধ্য দিয়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণ করছে বেইজিং। প্রকল্পগুলো শেষ হলে এই অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও আফগানিস্তান থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে বেইজিংয়ের লক্ষ্য পূরণ হবে। ফলে তালেবানবরা যদি আবারও আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তাহলে বেইজিং অনেক লাভবান হবে।’
গত মাসে তালেবানদের মুখপাত্র সোহাইল শাহিন এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘চীন বন্ধুত্বপূর্ণ একটি দেশ। আফগানিস্তানের পুনঃগঠন ও উন্নয়নের জন্য আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাই। চীন যদি বিনিয়োগ করে তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।’
চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ শিনজিয়াংয়ে বিদ্রোহের জন্য নিবেদিত কোনো ইসলামপন্থী বিদ্রোহিকে নিরাপদ আশ্রয় না দিতে এরইমধ্যে তালেবানদের একটি চুক্তি করিয়ে নিয়েছে বেইজিং।
অন্যদিকে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য শান্তি প্রক্রিয়ায় ফিরে না আসলে তালেবানদের ‘আন্তর্জাতিক বৈধতা’র অভাবে পড়তে হবে বলে বারবার হুমকি দিয়ে আসছে বাইডেন প্রশাসন।