বর্ষা মৌসুমের শেষভাগে চকচকে রুপালি ইলিশে ভরে ওঠছে বাজার। কয়দিন আগেও বড় ইলিশ খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর ছিল। এখন মাঝারি ও বড় আকৃতির ইলিশই বেশি। কিন্তু আকৃতিতে বড়, সাদা চকচকে রঙ হলেই কি ইলিশ স্বাদের হয়, এমন দ্বিধা দ্বন্দ্ব কিন্তু ক্রেতাদের মাঝে প্রায়ই দেখা যায়।
যেহেতু বাঙালির কাছে ইলিশের আদর-কদরটা অন্য মাছের তুলনায় বেশি। তাই বাজারে বেশি বেশি ইলিশ ওঠলেই তারা ছুটেন কিছুটা কম দামে পদ্মার ইলিশ কিনতে। কিন্তু বিক্রেতার কথা মতো সব মাছই তো আর পদ্মার হতে পারে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভালো রূপালি ইলিশ চেনার উপায়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, দেশে সারা বছরে যে টনে টনে ইলিশ ধরা পড়ে, তার মাত্র ১০ শতাংশ আসে পদ্মা থেকে। বড় অংশ ধরা হয় মেঘনা ও উপকূলীয় নদী এবং বঙ্গোপসাগর থেকে। পদ্মার পরে পটুয়াখালীর পায়রা ও ভোলার তেঁতুলিয়া নদীর ইলিশের স্বাদ ও সুনাম এখন সবচেয়ে বেশি। দুই বছর ধরে তো হাওরেও ইলিশ ধরেছেন জেলেরা। শুধু ঢকার আশপাশের দূষিত নদীগুলো ছাড়া দেশের অনেক নদীতেই ইলিশ পাওয়া গেছে দুই-তিন বছর ধরে।
মাছবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বাংলাদেশের ইলিশের তিনটি উপপ্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো উপকূলীয়, মেঘনা ও পদ্মার ইলিশ। এর মধ্যে পদ্মার ইলিশ দৈর্ঘ্যে ছোট ও প্রস্থে বড় হয়। অর্থাৎ এদের পেটটা একটু মোটা ও আয়তনে ছোট হয়। আর এর গায়ের রঙ হয় সাদা চকচকে। অন্যদিকে উপকূলের ইলিশ খানিকটা সরু ও লম্বাটে হয়ে থাকে। এদের স্বাদ অন্য দুই ইলিশের উপপ্রজাতির তুলনায় কম। আর মেঘনার ইলিশ মাঝারি আকৃতির ও পেটের দিকটা একটু কালচে হয়ে থাকে।
সাধারণত বর্ষার মাঝামাঝি সময়ের ইলিশ বেশি সুস্বাদু হয়। লোনা ও মিঠা পানির ওপর নির্ভর করে ইলিশের স্বাদ বাড়ে ও কমে। এক্ষেত্রে নদীর ইলিশের স্বাদ বেশি। ডিম ছাড়া আগের ইলিশ বেশি তেলযুক্ত ও সুস্বাদু থাকে। ডিমওয়ালা কিংবা ডিম ছাড়ার পরের ইলিশের পেটি অনেকটা পাতলা হয়ে যায়। যে কারণে এই ইলিশের স্বাদ কিছুটা কমে যায়। আগস্টের মাসের দিকে ইলিশ ডিম ছাড়তে শুরু করে। ডিমওয়ালা ইলিশ চ্যাপ্টা আকৃতির হয়। এ ধরনের ইলিশের পেট টিপলে পায়ুপথের ছিদ্র দিয়ে ডিম বের হয়ে আসে। অপরদিকে ডিম ছাড়া ইলিশের পেট অনেকটা ঢিলে হয়।
তবে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো, পদ্মার ইলিশ সমুদ্র থেকে স্রোতের উল্টো পাশে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ কিলোমিটার সাঁতার কেটে নদীতে পৌঁছায়। স্রোতের উল্টো দিকে ঘোলা পানি দিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার ফলে এর গায়ের রঙ সাদা চকচকে হয়ে ওঠে। আর পদ্মার পানিতে পলি বেশি থাকে, ফলে তা ঘোলাটে হয়। এর ফলে এতে ডায়াটম নামে একধরনের শৈবাল তৈরি হয়। ইলিশ সেগুলো খেয়ে পুষ্টি পায়, ফলে এর স্বাদ হয় সবচেয়ে ভালো।
অন্যদিকে মেঘনায় থাকে সবুজ নীলাভ শৈবাল। যা খেলে ইলিশের স্বাদ ভালো হয়, তবে তা পদ্মার মতো হয় না। আর সমুদ্রের ইলিশ খায় সামুদ্রিক শৈবাল, ফলে এর স্বাদ অন্য দুটির চেয়ে কম হয়। তাই রূপালি ইলিশ কেনার সময় আকৃতি ও রঙ দেখে নিন। বড় ইলিশ কিনতে পারলে ভালো, তাহলে স্বাদে ঠকার সম্ভাবনা থাকে না।