আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একজন বিশিষ্ট সাহাবি। তিনি ‘আমওয়াস’ মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে ১৮ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি জর্দানে অবস্থান করছিলেন এবং তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। (উসদুল গাবাহ : ৬/২০১)
পরিচয় : তাঁর মূল নাম আমের ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে জাররাহ। কিন্তু তিনি উপনাম ‘আবু উবায়দা’ নামেই বেশি পরিচিত। দাদার নামের সঙ্গে যুক্ত করে তাকে বলা হয় আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)। তিনি ইসলামগ্রহণে অগ্রগামীদের একজন ছিলেন এবং হাবশা ও মদিনায় দুবার হিজরত করেন। তিনি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং উহুদের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাথায় শিরস্ত্রাণের কড়া ঢুকে গেলে তিনি তা দাঁত দিয়ে উঠানোর চেষ্টা করলে দাঁত শহীদ হয়ে যায়। (উসদুল গাবাহ : ৩/২৬; আল-ইসাবাহ : ৩/৪৭৫)
বিশেষ মর্যাদা : ইসলামগ্রহণে অগ্রগামী ও নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে সব যুদ্ধে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য অর্জিত হওয়ায় আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-কে সাহাবিদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী মনে করা হতো। তিনি পৃথিবীতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্তদের একজন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আবদুল্লাহ ইবনে শাকিক (রা.) বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করি, সাহাবিদের মধ্যে নবীজি (সা.)-এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কে ছিলেন? তিনি বলেন, আবু বকর (রা.)। আমি বললাম এরপর? তিনি বলেন, ওমর (রা.)। আমি বললাম তাঁর পরে? তিনি বলেন, আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৫৭)
আবু উবায়দা (রা.)-এর ব্যাপারে নবীজি (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির একজন ‘আমিন’ (বিশ্বস্ত ও আস্থাশীল ব্যক্তি) রয়েছে, এই উম্মতের আমিন হলো আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৩৮২)
উম্মতের প্রতি অসিয়ত : মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার পর যখন লোকেরা বুঝতে পারল যে তাঁর মৃত্যুর সময় সন্নিকটে তখন তাঁকে কিছু উপদেশ দেওয়ার অনুরোধ করা হলো। তিনি উম্মতের প্রতি চারটি উপদেশ দিলেন—
১. তিনি মুসলিম জাতিকে যথাযথভাবে নামাজ সংরক্ষণ, জাকাত আদায়, রমজান মাসের রোজা পালনের উপদেশ দেন।
২. তিনি হজ-ওমরাহ ও বেশি বেশি নফল দান করার উপদেশ দেন।
৩. তিনি মুসলিমদের পরস্পর ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার নির্দেশ দেন। আর মুসলিম শাসকদের উপদেশ দেন যেন তাদের ভয় এত প্রবল না হয় যে জনসাধারণ প্রতারণার আশ্রয় নেয়।
৪. তিনি মুসলিমদের পরামর্শ দেন যেন তারা মৃত্যু ও আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তুতি নেয়। কেননা সেটাই আদম সন্তানের পরিণতি। পৃথিবীর চাকচিক্য ও ভোগ-বিলাস যেন তাদের ব্যস্ত করে না রাখে। নিশ্চয়ই মুমিনদের মধ্যে সেই সবচেয়ে উত্তম যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর অনুগত, সবচেয়ে বেশি আমল করে এবং পরকালের জন্য প্রস্তুত হয়। (কানজুল উম্মাল : ১৩/২১৯)