আসিফ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম ।।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চীনে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু করছে সুইস প্রতিষ্ঠান মেডিটারিয়ানিয়ান শিপিং কম্পানি (এমএসসি)। এর মধ্য দিয়ে চীন থেকে সরাসরি কনটেইনারভর্তি পণ্য দেশে আনার সুযোগ তৈরি হবে, যাতে সময় লাগবে ১৩ দিন। বর্তমানে চীন থেকে পণ্য সিঙ্গাপুর ও কলম্বো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে দেশে আসতে সময় লাগছে ২৬ দিন। নতুন সার্ভিসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেঙ্গল এক্সপ্রেস’, যাত্রা শুরু হবে ২৭ এপ্রিল।
নতুন এই সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পই সবচেয়ে লাভবান হবে বলে আশা করছে এমএসসি। একই সঙ্গে আমদানি পণ্যও দ্রুত এবং সাশ্রয়ে দেশে আসার সুযোগ পাবে। সার্ভিসটি এমন সময়ে চালু করা হচ্ছে যখন শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর ঘিরে জাহাজজটের কবলে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। নতুন এই সার্ভিসে কলম্বো বন্দর এড়িয়ে সিঙ্গাপুর দিয়েই পণ্য রপ্তানি করার পরিকল্পনা করেছে শিপিং লাইনটি।
জানতে চাইলে এমএসসির হেড অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘এমএসসি কাইমিয়া জাহাজ দিয়ে আমাদের প্রথম সার্ভিসটি যাত্রা শুরু হবে ২৭ এপ্রিল। মোট ছয়টি জাহাজ দিয়েই আমরা সার্ভিস পরিচালনা করব। সপ্তাহে একটি করে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়বে। ’
তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ চীনের বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি পণ্য পরিবহন করা যাবে বেঙ্গল এক্সপ্রেস সার্ভিসে। আসার পথে সিঙ্গাপুরে থামবে যদি চট্টগ্রামমুখী পণ্য থাকে। না থাকলে সরাসরি চট্টগ্রাম চলে আসবে, যাতে সময় লাগবে ১৩ দিন। নতুন সার্ভিসের মাধ্যমে কম ভাড়ায় এবং কম সময়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ থাকছে। দেশের গার্মেন্টশিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে এটি অনেক সুবিধা বয়ে আনবে।
উল্লেখ্য, ৭ এপ্রিল এমএসসি কর্তৃপক্ষ নতুন রুট পরিচালনার ঘোষণা দেয়। বেঙ্গল এক্সপ্রেসের রুটটি হবে হংকং-চীনের ইয়ানতিয়ান-চীনের সেকু-সিঙ্গাপুর-তানজুম পেলিপাস-চট্টগ্রাম। ফিরতি পথে চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর-হংকং পৌঁছবে।
জানা গেছে, বর্তমানে চীন-চট্টগ্রাম রুটে তিনটি শিপিং কম্পানি সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু রেখেছে। একটি হচ্ছে ড্যানিশ শিপিং কম্পানি এমসিসি লাইন, সপ্তাহে তিনটি জাহাজ, হুন্দাই-সিনোকর সপ্তাহে পাঁচটি জাহাজ; এসআইটিসি-সিএমএ সপ্তাহে পাঁচটি। এমএসসি নতুন সার্ভিস চালু করায় প্রতিযোগিতায় পড়বে জাহাজ কম্পানিগুলো, আর এতে লাভবান হবেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
২০১১ সালে চীন-চট্টগ্রাম সার্ভিস চালু করেছিল বিদেশি শিপিং কম্পানি পিআইএল। বেশ কিছুদিন চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। সেই সার্ভিস পরিচালনার সময় যুক্ত ছিলেন তখনকার মহাব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ জহীর। তিনি বলেন, মূলত ওই সময় খরচ এবং আয়ে সামঞ্জস্য রাখতে না পারা এবং আমদানি নির্ভরতার কারণেই এক পর্যায়ে সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে নতুন যারা এই রুটে সার্ভিসটি চালু করেছে, তারা সেগুলো উত্তরণ ঘটিয়েই এখন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করছে বেশ ভালোভাবেই।
তিনি আরো বলেন, ‘এমএসসি এই রটে পণ্য পরিবহন শুরু করায় আমদানিকারকদের সার্ভিস বেছে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক ভাড়ায় পণ্য পরিবহন করতে পারবেন। আর এমএসসি এমন সময়ে সার্ভিসটি চালু করেছে যখন করোনার কারণে এখন জাহাজ ভাড়া অনেক বেশি। আমাদের সময়ে ভাড়া ছিল খুবই কম। ’
বর্তমানে এই রুটে সবচেয়ে কম সময়ে পণ্য পরিবহন করছে এমসিসি ও হুন্দাই-সিনোকর সার্ভিস। তাদের প্রতিটি জাহাজ চীন থেকে চট্টগ্রাম আসতে সময় লাগছে মাত্র ১১-১২ দিন। এমসিসি সার্ভিসও সরাসরি চীনের সাংহাই নিমবো থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহন করছে।
হুন্দাই-সিনোকর সপ্তাহে পাঁচটি জাহাজ দিয়ে কোরিয়া-চীন-বাংলাদেশ (কেসিবি) বেশ ভালোভাবেই পণ্য পরিবহন করছে।