আল্লাহ বলেন, ‘কাফিররা যখন আপনাকে দেখে তখন তারা আপনাকে বিদ্রুপের পাত্র হিসেবেই গ্রহণ করে, (তারা বলে) ‘এই কি সে যে তোমাদের উপাস্যগুলো নিয়ে কথা বলে?’ অথচ (বাস্তবতা হলো) তারাই তো পরম করুণাময়ের বিরোধিতা করে। ’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩৬)
তাফসির : আগের আয়াতগুলোতে মৃত্যুর কথা বলে মানুষকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কাফির-মুশরিকদের ঠাট্টা-বিদ্রুপের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মূলত ইসলাম ও এর নানা অনুষঙ্গ নিয়ে হাসি-ঠাট্টার বিষয়টি খুবই গুরুতর অপরাধ।
এ ধরনের অশালীন আচরণ মহানবী (সা.)-কে খুবই পীড়া দিত। তাই ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও রাসুলকে পীড়া দেয় আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন, তিনি তাদের জন্য লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৭)
অথচ কাফির-মুশরিকদের উচিত ছিল এই বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা যে মুহাম্মদ তো তাদের সামনেই সত্যবাদী হিসেবে বড় হয়েছে। তার সততা, আচার-ব্যবহার ও স্বভাব-চরিত্র সর্বজনবিদিত। পবিত্র কোরআনের অবতীর্ণ আয়াত শুনে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করা তাদের কর্তব্য ছিল। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জবাবে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা প্রকাশ্যে প্রচার করুন এবং মুশরিকদের উপেক্ষা করুন। বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে আপনার জন্য আমিই যথেষ্ট। ’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৯৪-৯৫)
অবাক করা ব্যাপার হলো, কাফিররা এমন বস্তুর উপাসনা করে যার সামান্য কিছু করারও সামর্থ্য নেই। আবার তারাই সেই মহান সত্তাকে অবিশ্বাস করে যিনি সর্বশক্তিমান, জীবন ও মৃত্যুদানকারী। অথচ মহানবী (সা.) তাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরলে তারাই বিষয়টি নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে এবং আজাব প্রত্যাশা করে। তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা আপনাকে দেখে তখন তারা আপনাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র হিসেবে গ্রহণ করে, (তারা বলে) ‘এই কি সে যাকে আল্লাহ রাসুল করে পাঠিয়েছেন? সে তো আমাদেরকে আমাদের উপাস্যদের থেকে দূরে সরিয়ে দিত যদি না আমরা দৃঢ় আনুগত্য করতাম’, যখন তারা আজাব প্রত্যক্ষ করবে তখন জানবে কে অধিক পথভ্রষ্ট। ’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৪১-৪২)
মুহাম্মদ (সা.)-এর আগে অনেক নবী-রাসুলের সঙ্গেও ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণ করা হয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহ নবী-রাসুলদের রক্ষা করেছেন এবং বিদ্রুপকারীদের সবাইকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার আগেও অনেক রাসুলের সঙ্গেই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছে, তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছিল পরিণামে তাই বিদ্রুপকারীদের পরিবেষ্টন করেছে। ’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১০)
ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে আল্লাহ, তাঁর নবী-রাসুল, কোরআন ও অন্য নিদর্শনাবলি নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা বড় ধরনের কুফরি। কোনো মুসলিমের সুস্পষ্ট কথা বা কাজের মাধ্যমে এমনটি প্রকাশ পেলে সে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে না; বরং সে কাফির বলে গণ্য হবে। পবিত্র কোরআনে মুনাফিকদের এমন আচরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আপনি তাদের প্রশ্ন করলে তারা অবশ্যই বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসুলকে নিয়ে উপহাস করছিলে?’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৬৫) (তাফসিরে মুনির : ১০/২৯১)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের পদস্খলন থেকে রক্ষা করুন এবং তাঁর দ্বিনের পরিপূর্ণ অনুসরণকারী হিসেবে কবুল করুন।
গ্রন্থনা : মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ