শিশু মানেই দুরন্ত, অস্থির। তাদের সময়ের বড়ই অভাব! কোনো কাজ তারা সময় নিয়ে করতে চায় না। এর মাঝে একটা কাজ হলো কমোডে বসে টয়লেট করা। এ যেন প্রতিটা মায়ের অভিযোগ। আমাদের দেশের প্রায় ৫০% বাচ্চা এই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগে। এ সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সাধারণত আসে খাবারে অনীহা, বমি, পেটে ব্যাথা, ঘন ঘন প্রসাব হওয়া, অথবা ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়া। মজার ব্যাপার হলো, মায়েরা ডক্টরকে বলেন- পাতলা পায়খানা হয়েছে। ডক্টর তাদের ওষুধ দেন, পায়খানা ভালো হয়ে যায়। কিন্তু দু’দিন পরেই আবার পায়খানা শক্ত হয়ে যায়। এই প্রোবলেমগুলো চলতেই থাকে। তাই সকল চিকিৎসকের প্রয়োজন রোগের পুরো বিবরণ শুনা, এরপর চিকিৎসা দেয়া।
কি কি কারণে এই সমস্যা দেখা যায়?
কারণ হিসেবে বলা হয়, সঠিক সময়ে পটির ট্রেনিং না করানো, গরুর দুধ খাওয়া, অতিরিক্ত ক্রিম বাটার দেয়া খাবার খাওয়া, কালো চকলেট খাওয়া। পানি ও সবজি কম খাওয়া।
রোগ নির্ণয় কিভাবে করতে হবে?
রোগ নির্ণয়ের জন্য তেমন কোনো জটিল পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। এ ক্ষেত্রে একটা x-Ray অথবা একটা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করলে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। মেয়ে বাচ্চাদের কোষ্ঠ কাঠিন্য থেকে ইউরিনে ইনফেকশন হয়ে যায়। তাই একটা urine R/E করিয়ে নেয়া যেতে পারে। অনেক সময় হরমোন সমস্যার জন্য এই প্রোবলেম হতে পারে, তাই একটা FT4, এবং TSH করিয়ে নিতে পারি।
চিকিৎসা বা করণীয় কি?
প্রথমত: মা’দের বোঝাতে হবে এটা ভালো হবে। তবে, ধৈর্যের সাথে চিকিৎসা করতে হবে। ল্যাকটুলজ একটু বেশি সময় ধরে দিতে হবে, সাথে শাক-সবজি, রসালো ফল, পানি, সরবত এগুলো বেশি বেশি খেতে হবে।
কম খেতে হবে: গরুর দুধ, চকলেট, চানাচুর, ক্রিম দেয়া খাবার, জাঙ্ক ফুড, আনার, আঙ্গুর, কাচা কলা।
প্রতিবেলা ভারী খাবারের পর বাচ্চাকে ৫-১০ মিনিট লো-কমোডে বসিয়ে রাখতে হবে। বাচ্চাকে টয়লেট করার জন্য ফোর্স করতে হবে না, শুধু অভ্যাস গড়ার জন্য বসাতে হবে। অনেক মা বলেন, বাচ্চা না খেলে পায়খানা হবে কি করে? আসলে খেলে পায়খানা করবে-না খেলেও করবে। শিশুকে খাবার ব্যাপারে মনোযোগী করতে হলে তার রেগুলার পায়খানা হতে হবে। তাই মা’দের সচেতন হতে হবে। শুধু ‘ঔষধ খাওয়ালেই সব সমস্যা চলে যাব’ এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। মনে রাখবেন, আজকের শিশু আগামীতে দায়িত্ববান একজন মানুষ। তাই, এই ছোট্ট শিশুকেই সময় মেনে খাওয়াবেন, জাগাবেন, পটির ট্রেনিং করাবেন, সময় মেনে ঘুমাতে দেবেন, প্রতিদিন গোসল করবেন, ঋতু উপযোগী দেশীয় সবুজ ও হলুদ ফল খাওয়াবেন। তাহলে ঔষধ ছাড়াই বেড়ে উঠবে আপনার সোনামনি।
লেখক:
সহকারি অধ্যাপক ডা: ফারহানা ইয়াসমিন
এমবিবিএস, এমডি
নবজাতক, শিশুরোগ, শিশুপুষ্টি, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ
farhanayasminsb@gmail.com