বাংলাদেশে ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ চিকিৎসা খরচ ব্যক্তি নিজে বহন করে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বিপর্যমূলক ব্যয়ের মধ্যে পড়ে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই এটা বেশি দেখা যায়। অথচ ভারত, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপের মতো দেশে কিডনি রোগীসহ অনেক জটিল রোগীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা চালু রয়েছে।
স্বাস্থ্যবীমা চালুসহ বা সরকারি সহায়তা সঠিকভাবে পেলে বাংলাদেশের মানুষকেও বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব। সরকারকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, জনগণকে সুস্থ রাখলে দেশের জিডিপি বাড়বে।
সোমবার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটের আয়োজনে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাউথ ইস্ট ইউনির্ভাসিটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এমেরিটাস ড. এম শমসের আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব হেলথ সায়েন্সের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহাবুব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন প্রাইসওয়াটার হাউস কুপার্স, বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মেরি স্টোপস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মামুন রশিদ। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন কিডনি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রুহুল আমিন রুবেল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস টিনি ফেরদৌস রশিদ প্রমুখ।
অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয় এবং এদের ৭৫ ভাগই মৃত্যুবরণ করে থাকে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনের চিকিৎসার অভাবে। এ ছাড়া হঠাৎ কিডনি বিকল হয়েও প্রতি বৎসর আরো ২০ হাজার রোগী মৃত্যুবরণ করে। এই রোগীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জেলা পর্যায়ে ডায়ালাইসিস সেবা চালুসহ এবংপ্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে কিডনি সংযোজনের ব্যবস্থা করা দরকার। আমরা কিডনি রোগীদের কার্ড চালু করতে চাই যার মাধ্যমে তারা যেন বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও চিকিৎসা পেতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা দরকার।
অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী বলেন, অসংক্রমক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ আধুনিক জীবনধারা। তাই জীবন ধারা পরিবর্তনের দিকে জোর দিতে হবে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা কর্মীর সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। তাই সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বেশি সংখ্যক দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা কর্মী তৈরি করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহাবুব বলেন, সব মানুষের চিকিৎসা পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার। সাবর্জনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার যেন দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় এবং অধিক ব্যবহৃত ওষুধগুলোর নির্দিষ্ট ও স্বল্পমূল্য নির্ধারণ করে দেয়, যাতে সাধারণ মানুষ সেসব ওষুধ সুলভে পেতে পারে।
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, কিডনি সংযোজনের খরচ কমিয়ে রোগীদের সাধ্যের মধ্যে করতে হবে। জনগণকে সুস্থ রাখলে দেশের জিডিপি বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে মাধ্যমে রোগীদের বিদেশ যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। দেশের অর্থ পাচার হওয়া রোধ করতে হবে।
মামুন রশিদ বলেন, প্রতি বছর বাজেট প্রণয়নের আগে চিকিৎসাক বা স্বাস্থ্য সেবার সাথে জড়িত যারা আছেন, এমনকি অর্থনীতিবিদরাও দাবি তোলেন যেন বাজেটের ৭-৮ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবা খাতে ব্যয় করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে ৩/৪ শতাংশের বেশি ব্যয় করা সম্ভব হয়ে উঠে না।