গ্রাম আদালতের মামলা আমলে নেওয়া যায় না। মহামান্য হাইকোর্ট বলেন, “ Taking cognizance of a village court triable case is illegal” আক্তার করিম বনাম রাষ্ট্র ৩৫ডিএলআর, পৃষ্টা-১০১, আবুল কালাম বনাম আবদুল মজিদ ৩২ডিএলআর, পৃষ্ঠা-২২১। এমনকি কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী আদালত উক্ত আদালতের বিচার করতে পারেন না। ফৌ:কা: বি: ৫৩০(ত)ধারা অনুযায়ী উক্ত বিচার এখতিয়ার বিহীন আদালত হিসেবে শুরু থেকে বাতিল হয়। তবে সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিংবা কর্তব্যপালনরত কোন কর্মচারী উক্ত বিবাদের পক্ষ হলে, নাবালকের স্বার্থ জড়িত থাকলে, চুক্তি উদ্ভূত বিরোধ হলে, স্বত্ব প্রতিষ্ঠা বা দখল উদ্ধারের কোন মোকদ্দমা চলমান থাকলে সে ক্ষে্ত্রে উক্ত বিষয়গুলোর বিচার গ্রাম আদালত করবে না(ধারা-৩, গ্রাম আদালত আইন-২০০৬)। আবার পুলিশ আমলযোগ্য অপরাধের তদন্ত বন্ধ করবে না। কিন্তু গ্রাম আদালতে বিচার্য কোন মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে কিংবা উক্তরূপ অপরাধ ফৌজদারী আদালতের নজরে আসলে উক্ত আদালত তা গ্রাম আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দিতে পারবে(ধারা-১৭)। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ নন-জিআর মোকদ্দমা গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচার্য্য। নন-জিআর মোকদ্দমা সংক্রান্তে ফৌ: কা: বি: ১৫৫ ধারা অনুযায়ী দরখাস্তকারীকে আদালতে হাজির হতে হয়। তাতে আদালত গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচার্য মামলাগুলো তদন্তের অনুমতি না দিয়ে সরাসরি গ্রাম আদালতে পাঠাতে পারেন। এতে কয়েক লক্ষ মোকদ্দমা হ্রাস পাবে।
গ্রাম আদালত একজন চেয়ারম্যান এবং উভয় পক্ষের মনোনীত ২জন করে মোট ৫জন নিয়ে গঠিত হয়(ধারা ৫)। উভয় পক্ষ ভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা হলে ভিন্ন গ্রামের প্রতিনিধিসহ যেখানে অপরাধ হয় সেই ইউনিয়নে গ্রাম আদালত বসবে(ধারা ৬)। তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সিদ্ধান্ত পক্ষগণকে বাধিত করে। আপীল করতে চাইলে এবং সিদ্ধান্ত ৩:২ হলে ৩০দিনের মধ্যে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সহকারী জজ আদালত এ আপীল দায়ের করতে হয়। অন্যথা এবং অন্য সবক্ষেত্রে উক্ত আদালতের সিদ্ধান্ত পক্ষগণ মানতে বাধ্য। আদালত ক্ষতিপূরণের আদেশ পাবলিক ডিমান্ডস রিকভারী এ্যাক্ট, ১৯১৩(এ্যাক্ট-১৯১৩ এর ৩)এর অধীনে আদায় করতে পারেন। সর্বোচ্চ ৭৫০০০/- টাকার মামলায় ৭৫০০০/-টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ কিংবা ৭৫০০০/-টাকার সম্পত্তির দখল প্রকৃত মালিককে ফেরতে দেওয়ার আদেশ দিতে আদালত সক্ষম। ক্ষতিপূরণ ছাড়া অন্য দাবী সহকারী জজ আদালত নিজ আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যকর করবেন। আইনজীবী নিয়োগ, ফৌ: কা: বি: এবং সাক্ষ্য আইন গ্রাম আদালতে নিষিদ্ধ। তবে শপথ গ্রহণ আইন ১৮৭৩ এর ৯,১০,১১ ধারা তাতে প্রযোজ্য।
গ্রাম আদালত নিজে কিংবা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গ্রাম আদালত হতে মামলা ফৌজদারী আদালতে পাঠাতে পারেন। আবেদন দাখিল, তার পরীক্ষা গ্রহণ, রিভিশন, রিভিশনের আবেদনের নিষ্পত্তি, সমনজারী, লিখিত আপত্তি, শুনানী মূলতবী, সাক্ষীর প্রতি সমন, সাক্ষ্য গ্রহণ, স্থানীয় পরিদর্শন, প্রতিবাদীর অনুপস্থিতিতে মামলার নিষ্পত্তি, নথীপত্র দেখা, নকল সরবারহ ইত্যাদি বিষয় গ্রাম আদালত বিধিমালা-২০১৬ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তবে পৌর এলাকায় গ্রাম আদালত আইনের পরিবর্তে ২৫০০০/(পচিঁশ হাজার)-টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের মামলায় বিরোধ মীমাংসা(পৌর এলাকা)বোর্ড আইন, ২০০৪ প্রযোজ্য।
চন্দন কান্তি নাথ: সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট