ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আগামী বছরের ১ এপ্রিল হতে সায়দাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল ব্যতীত ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে আর কোনও আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার থাকতে দেওয়া হবে না। নতুন বছরের শুরুতে আরও তিন রুটে নগর পরিবহন চালু করা হবে। সেগুলো হল- ২৩, ২৪ ও ২৫ নম্বর রুট।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএসসিসি মেয়র প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ কমিটির ২৫তম সভা শেষে সাংবাদিকদেরকে সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমরা দেখি যে, আমাদের যে বাস টার্মিনালগুলো আছে সেগুলোর কার্যকারিতাকে ঠিকমতো বাস্তব রূপ দেওয়া হয় না। এ ব্যাপারে আমরা আরও কঠোর হতে চাই। আমাদের সায়দাবাদ বাস টার্মিনালের সংস্কার চলছে। এটা মার্চ মাসের মধ্যে শেষ হবে। আমরা পহেলা এপ্রিলে সেটার উদ্বোধন করবো। আমাদের মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালের যে সংস্কার প্রয়োজন আছে, সেগুলোরও আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করবো এবং সকল উদ্যোগ সম্পন্ন করব। আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে ঢাকা শহরে টার্মিনাল ব্যতীত আর কোথাও কোনও কাউন্টার আমরা রাখতে দেবো না।
তিনি বলেন, এই সভায় আমাদের মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সকলকে আমরা অবগত করতে চাই যে, পহেলা এপ্রিল থেকে ঢাকা শহরে যত্রতত্র কোনও কাউন্টার রাখতে দেওয়া হবে না। আমরা দেখি জিগাতলায় একটা কাউন্টার, কলাবাগানে একটা কাউন্টার, খিলগাঁওয়ে আরেকটা কাউন্টার, যার যেখানে ইচ্ছা সেখানে কাউন্টার খুলে বসে আছে। এতে যেমনি যানজটের সৃষ্টি করে, তেমনি অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমরা এসব বিষয়ে আরও কঠোর হচ্ছি। পয়লা এপ্রিল ২০২৩ এর পরে টার্মিনালের অভ্যন্তর ব্যতীত বাইরে কোথাও যত্রতত্র আর কোনও কাউন্টার রাখতে দেব না। কাউন্টার না রাখলে সেখানে বাসও যেতে পারবে না। রাস্তাও ব্যবহার করতে পারবে না। সকলকেই টার্মিনাল ব্যবহার করতে হবে। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে শুধু যাত্রী সেবা নয়, গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা আরও সুশৃঙ্খল হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আমরা বাস রুট র্যাশনাইলেজশনের মাধ্যমে ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। অথচ প্রায়ই দেখা যায়, টার্মিনালগুলোর সামনে বাসগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, শৃঙ্খলা ব্যহত হচ্ছে। ১ এপ্রিল থেকে কোনও বাস রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে না। টার্মিনালের বাহিরে কোন বাস দাঁড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও জায়গায় জায়গায় ছাতার মতো টিকেট কাউন্টার থাকবে না। টার্মিনালের বাহিরে কোন কাউন্টার থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, ২১, ২২ ও ২৬ নাম্বার রুটে শুধু রুট পারমিটবিহীন বাস নয় নগর পরিবহন ব্যতীত অন্য কোন বাস চলবে না। এই রুটে শুধু নগর পরিবহন চলবে। এটি নিশ্চিত করতে আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হবে। এমনকি লেগুনাও চলবে না। শুধু নগর পরিবহন চলবে এই তিন রুটে।
২৩ নম্বর রুট: আগামী ৩১ জানুয়ারি চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই রটের বাসগুলোর স্টপেজগুলোর মধ্যে রয়েছে-ঘাটারচর, ওয়াশপুর, বসিলা, মোহাম্মদপুর, জাপান গার্ডেন সিটি, শ্যামলী, কলেজ গেট, আসাদ গেট, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান (জিরো পয়েন্ট), দৈনিক বাংলা, রাজার বাগ, কমলাপুর, ধলপুর, যাত্রাবাড়ী, শনির আখরা রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড এবং চিটাগং রোড।
২৪ নম্বর রুট: আগামী এপ্রিল মাসে এই রুটে চালু হবে ঢাকা নগর পরিবহন। এই রুটের বাস স্টপেজগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঘাটারচর, বসিলা, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, শিশুমেলা, আগারগাঁও, মিরপুর ১০ দিয়ে কালসি ফ্লাইওভার হয়ে এয়ারপোর্ট এবং জসিমউদ্দীন হয়ে আব্দুল্লাহপুর।
২৫ নম্বর রুট: এই রুটটিও আগামী এপ্রিল মাসে চালু হবে। এই রুটের স্টপেজগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঘাটারচর, বসিলা, মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড, আসাদগেট, মানিক মিয়া এভিনিউ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে বিজয় সরণি দিয়ে বের হয়ে জাহাঙ্গীর গেইট, শাহিন স্কুল, মহাখালি ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে, কাকলি, বনানী উড়ালসেতু হয়ে রিজেন্সি, এয়ারপোর্ট, জসিমউদ্দীন এবং আব্দুল্লাহপুর।
অন্যান্যের মধ্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব আকরামুজ্জামান, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।