২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এই উদ্বোধনকে ঘিরে ছিল রীতিমতো চাঁদের হাট।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যটির রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।মঞ্চ আলোকিত করে ছিলেন বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, সাবেক ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী, তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা, পরিচালক মহেশ ভাট, অভিনেত্রী জয়া বচ্চন, রানী মুখার্জি, গায়ক কুমার শানু ও অরিজিৎ সিং, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, দীপক অধিকারী (দেব), সোহম চক্রবর্তী, অভিনেত্রী শ্রাবন্তী, মিমি চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা ব্যানার্জি ও পাওলি দাম।
এছাড়াও ছিলেন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, জুন মালিয়া, কোয়েল মল্লিক, শুভশ্রী গাঙ্গুলী, ইন্দ্রানী হালদারসহ টলিউডের এক ঝাঁক শিল্পী।
প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন অমিতাভ বচ্চন। এ সময় মঞ্চে আলোকিত করেছিলেন অন্য অতিথিরাও।
এদিনের অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পর্যটন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, তথ্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, বন প্রতিমন্ত্রী ও সাঁওতালি অভিনেত্রী বিরবাহা হাঁসদা সহ মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় ও তার সংস্থার শিক্ষার্থীরা বিশেষ নৃত্যঅনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জি বলেন, “বাংলা সব সময় লড়াই করে একতার জন্য, মানবিকতা, সংহতির জন্য। এর লড়াই চলতেই থাকবে। আমরা লড়াই করে এটাই বোঝাতে চাই যে বাংলা কখনো মাথা নত করে না। বাংলা কখনো কারো কাছে ভিক্ষা চায় না। মাথা উঁচু করে চলে। বাংলা টলিউড, বলিউড সকলকে নিয়ে একসাথে চলতে জানে। আমি মনে করি বাংলা একদিন বলিউড, হলিউড দখল করবে। মনে রাখতে হবে আমরা সকলেই এক পথে চলতে চাই।”
এ সময় অমিতাভ বচ্চন জানান, “গত তিন বছর এই উৎসবে আসতে পারেনি, আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ দেখা করতে পারিনি তাই অনেক কষ্ট হয়েছে। তিন বছর পর এই অনুষ্ঠান আসতে পেরে আমি খুবই গর্ববোধ করছি।”
তিনি আরো বলেন, “কলকাতা, আমার বাড়ির মতো আপনাদের জামাইবাবু চিরকাল আপনাদের জামাইবাবু হয়েই থাকবে।”
করোনা মহামারির ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে অমিতাভ বচ্চন বলেন, “আপনারা সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন এটাই আমার আন্তরিক মন ও কামনা।”
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রচুর মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন, এই চলচ্চিত্র উৎসবে ভাল ছবি দেখার জন্য। আমরা সেই সুযোগ করে দিই। পাশের দেশ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও প্রচুর ছবি এখানে আসে। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব ধীরে ধীরে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা খুবই উৎসাহ ব্যঞ্জন হয়ে উঠেছে। কারণ ভারতবর্ষের দিকপালদের সাথে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সঙ্গে একটা মেলবন্ধন হচ্ছে।”
তার অভিমত, “ভালো সিনেমা দেখার যে সংস্কৃতি সেটাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে।”
আট দিনব্যাপী (১৫ থেকে ২২ ডিসেম্বর) চলচ্চিত্র উৎসবে ৪২ দেশের মোট ১৮৩টি ছবি দেখানো হবে। উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হচ্ছে পরিচালক ঋষিকেশ মুখার্জি পরিচালিত এবং অমিতাভ বচ্চন জয়া বচ্চন অভিনীত হিন্দি ছবি ‘অভিমান’।
নন্দন-১,২ ৩, নজরুল তীর্থ-১,২ ৩, রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবন (রাধা স্টুডিও) ও সল্টলেকের রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন-কলকাতার এই দশটি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে এই ছবি গুলি।
২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের থিম রাখা হয়েছে বিশ্ব মেলে ছবির মেলায় (মিট দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ওয়ার্ল্ড অফ সিনেমা)। এবার মোট পাঁচটি আলাদা প্রতিযোগিতামূলক বিভাগ রয়েছে-এগুলি হল ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজ, কম্পিটিশন অল ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস, এশিয়ান সিলেট (নেটপ্যাক অ্যাওয়ার্ড), ন্যাশনাল কম্পিটিশন অন ডকুমেন্টারি এবং শর্ট ন্যাশনাল কম্পিটিশন অন ফিকশন। এছাড়াও দুটি নন-কম্পিটিশন বিভাগ থাকবে, এ দুটি হল-সিনেমা ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গলি প্যানোরামা।
এই উৎসবের সেনটেনারি ট্রিবিউট বিভাগে থাকছে ঋষিকেশ মুখোপাধ্যায়, ভারতী দেবী, দিলীপ কুমার, অসিত সেন, কে আসিফ, অ্যালা রেনে, আলি আকবর খা, পাওলো পাসোলনির ছবি।
ক্রীড়া বিষয়ক বেশ কয়েকটি ছবি দেখানো হবে এবার। সেই তালিকায় রয়েছে ৮৩, এমএস ধোনি, চক দে ইন্ডিয়া, মেরি কম, কোনি, ভাগ মিলখা ভাগ প্রমুখ।
এ বছর ৮০-তে পা দিলেন অমিতাভ বচ্চন। তাকে সম্মান জানাতে চলচ্চিত্র উৎসবে তার নয়টি ছবি প্রদর্শিত হবে। কলকাতার গগনেন্দ্রপ্রদর্শশালা ও নজরুল তীর্থে অমিতাভ বিষয়ক প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে।
বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে জ লু গদার ও তরুণ মজুমদারকে। দুই কিংবদন্তি পরিচালিত বেশ কিছু ছবি দেখানো হবে এবারের উৎসবে।
এবার এই চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের মোট চারটি সিনেমা। এগুলি হল পরিচালক মো. কাইয়ুম এর ‘দ্য গোল্ডেন উইংস অফ ওয়াটারকক্স’, পরিচালক ফখরুল আরেফিন খানের ‘জেকে ১৯৭১’, পরিচালক গৌতম ঘোষের ‘মুজিব ইন ক্যালকাটা’ এবং পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ সিনেমা।
সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘হাওয়া’ সিনেমাটি। সিনেমা প্রেমী দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত এই ছবিটি।
এবারের কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হাওয়া’ সিনেমাটি দেখানো হবে আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর নন্দন-১ সন্ধ্যা সাতটার শো’য়।
‘দ্য গোল্ডেন উইংস অফ ওয়াটারকক্স’ ছবিটি দেখানো হবে আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর নন্দন-১ এ সকাল সাড়ে এগারোটার শো’তে। দ্বিতীয় বার ২১ ডিসেম্বর নজরুল তীর্থ-১ মঞ্চে বিকাল ৪ টার শো’এ দেখানো হবে।
‘জেকে ১৯৭১’ সিনেমাটি আগামী ১৯ ডিসেম্বর বিকাল চারটে শো’এ নন্দন-২ তে দেখানো হবে এই ছবিটি। দ্বিতীয় বার ২০ ডিসেম্বর রবীন্দ্র সদনে বিকাল ৪ টার শো’এ দেখানো হবে এই ছবিটি। ‘মুজিব ইন ক্যালকাটা’ ছবিটি দেখানো হবে ১৭ ডিসেম্বর নন্দন-১’এ সন্ধ্যা সাতটার শো’তে।