রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামে যোগাযোগের প্রধান সড়ক পতেঙ্গা-লালখান বাজার পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এরই মধ্যে মূল কাজ শেষ করা হয়েছে ৭৫ শতাংশ। ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে ১২ কিলোমিটার। নির্মিত হয়েছে ২৮৪টি পিলার। ফলে ডিসেম্বরেই খুলবে স্বপ্নের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি চালু হলে সুফল মিলবে বঙ্গবন্ধু টানেলের। কমবে যানজট, ভোগান্তি। নিরাপত্তা, নজরদারি, দুর্ঘটনা ও অপরাধ পর্যবেক্ষণে বসানো হবে ২০০ সিসি ক্যামেরা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকায় পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বাস্তবায়ন করছে। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে হচ্ছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে। এ বন্দর দিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আসে দেশে। রাজস্ব আহরণের ফুসফুস খ্যাত কাস্টমস চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামেই আছে তিনটি ইপিজেড ও ৫ শতাধিক তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান। অথচ চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়কটিই দুই লেনের। ফলে নিয়মিতই লেগে থাকে যানজট। বিঘ্নিত হয় বাণিজ্য। মুখ থুবড়ে পড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ। সরেজমিন দেখা গেছে, বর্তমানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন অংশে একযোগে কাজ চলছে। পতেঙ্গা, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট ও টাইগার পাস এলাকায় চলছে নির্মাণ, ঢালাই এবং সৌন্দর্যবর্ধন কাজ। তবে এখন বেশি শ্রমিক কাজ করছেন দেওয়ানহাট থেকে লালখান বাজার এলাকায়। বর্তমানে একযোগে তিন শিফটে কাজ করছেন প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক। ৩২০টি পিলারের মধ্যে ২৮৪টির কাজ শেষ।
ওয়েল গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ তারিকুল ইসলাম বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ অবশ্যই সুখবর। এর মাধ্যমে ৪০ থেকে ৬০ মিনিটেই বিমানবন্দরে যাওয়া যাবে। কিন্তু এর সঙ্গে আরও কিছু অবকাঠামোর উন্নয়ন দরকার। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে সমৃদ্ধ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বৃদ্ধি করা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়াতে উন্নতমানের হোটেল নির্মাণ করতে হবে। তাহলেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় উন্নয়ন প্রকল্পের বহুমুখী সুফল মিলবে। প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উৎকর্ষতা সাধন হবে। মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক তরুণ উদ্যোক্তা সারওয়ার আলম বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি চট্টগ্রামে যোগাযোগে নতুন দিগন্ত সূচনা করবে। সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দর থেকে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন দ্রুত গন্তব্যস্থলে যেতে পারবে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোনের সঙ্গে নগরের যোগাযোগও বাড়বে। তাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি চট্টগ্রামের জন্য অতি জরুরি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে মূল অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে ৭৫ শতাংশ। নির্মাণ হয়েছে ২৮৪টি পিলার এবং ঢালাই শেষ হয়েছে ১২ কিমি ছাদের। বর্তমানে তিন শিফটে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তিনি বলেন, করোনা, বিভিন্ন স্থানে জায়গা নিয়ে নানা জটিলতাসহ নানা কারণে কাজ বিলম্ব হয়। এখন এসব সমস্যা নিরসন হয়েছে। তাই কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়ক পতেঙ্গা-বিমানবন্দর থেকে কালুরঘাট। কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। যানজটে পড়লে আরও বেশি সময় লাগে। যানজটের কারণে বিমান যাত্রীদের ফ্লাইট মিস করার ঘটনাও আছে। বাণিজ্যিক রাজধানীর এ মূল সড়কটির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। ক্ষুণ্ন হয় দেশের ভাবমূর্তি। কিন্তু এখন পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি নির্মাণ হলে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছা যাবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর। কমবে যানজট, ভোগান্তি। আকৃষ্ট হবেন দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগকারীরা। বাড়বে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। বিকশিত হবে পর্যটন খাত। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে যোগাযোগব্যবস্থায়। সংযুক্ত হবে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে। যানজট মুক্ত হবে বিমান যাত্রীদের যাতায়াত পথ। সঙ্গে ভোগান্তি নিরসন হবে কালুরঘাট-পতেঙ্গা পর্যন্ত মূল সড়কে যাতায়াতকারীদের। চউক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এই এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাট, দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড়, কাঠগড় থেকে ভিআইপি রোড এবং সি-বিচ থেকে ভিআইপি রোড পর্যন্ত ভাগ করে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পুরো এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় গাড়ি ওঠা-নামার জন্য ২৪টি র্যাম্প থাকবে। এর মধ্যে টাইগার পাস এলাকায় চারটি, আগ্রাবাদে চারটি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে দুটি, নিমতলী মোড়ে দুটি, কাস্টমস মোড়ে দুটি, সিইপিজেডে চারটি, কেইপিজেডে দুটি, কাঠগড়ে দুটি, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় থাকবে দুটি র্যাম্প। প্রতিটি র্যাম্প হবে দুই লেনের এবং একমুখী। এক্সপ্রেসওয়েতে মোট পিলার হবে ৩৯০টি।