প্রায় ৫০ বছর পর আবারও চাঁদে মানুষের পা পড়তে চলেছে। একইসঙ্গে অনেকগুলো ঐতিহাসিক ঘটনাও ঘটতে চলেছে এই অভিযানে। এই প্রথম চাঁদে পা পড়বে কোনো নারীর। এই প্রথম চাঁদে যাচ্ছেন কোনো কৃষ্ণাঙ্গ। এই প্রথম চাঁদে যাবেন কোনো কানাডার নাগরিক। ২০২৪ সালের জন্য নাসা চাঁদের যে মিশনটি তৈরি করছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে আরটেমিস টু লুনার মিশন।
নাসার তিনজন মহাকাশযাত্রী এই মিশনে যোগ দেবেন। তাদের মধ্যে নভোচারী রেইড ওয়াইজম্যান (তিনি এর আগে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমান চালিয়েছেন। এ ছাড়া নাসার প্রধান নভোচারী হিসেবেও কাজ করেছেন), ভিক্টর গ্লোভার (প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নভোচারী হিসেবে এই অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। তিনি এর আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাজ করেছেন। চন্দ্র মিশনের ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন তিনি) এবং ক্রিস্টিনা কোচ, তার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে কানাডিয়ান মহাকাশ সংস্থার নভোচারী জেরেমি হ্যানসেনের প্রথম মহাকাশযাত্রা হবে এটি। তিনি কানাডার সেনাবাহিনীর সদস্য এবং এ মিশনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।
তবে তারা প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণাগারে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। নারী হিসেবে সবচেয়ে বেশিদিন মহাকাশের গবেষণাগারে সময় কাটিয়েছেন চাঁদে পা দিতে যাওয়া ওই নারী। সব মিলিয়ে তিনি সেখানে ছিলেন ১১ মাস। বস্তুত, এর আগে শেষ কোনো মহাকাশচারী চাঁদে গেছিলেন ১৯৭২ সালে। সেই ঐতিহাসিক চন্দ্রাভিযানের নাম ছিল অ্যাপোলো এক্সপ্লোরেশন।
আগের চন্দাভিযানের নামকরণ করা হয়েছিল গ্রিক চন্দ্রদেবতা অ্যাপোলোর নামানুসারে। এবার যেহেতু চাঁদে প্রথম নারীর পদচিহ্ন পড়তে যাচ্ছে, তাই অ্যাপোলোরই যমজ বোন আর্টেমিসের নামে এ মিশনের নামকরণ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হাউসটনে জনসন স্পেস সেন্টারে চার নভোচারীকে পরিচয় করিয়ে দেন নাসার পরিচালক বিল নেলসন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী রকেট তাদের চাঁদে আনা–নেওয়া করবে। আমরা চাঁদের অভিযান শুরু করছি। এরপর আমরা মঙ্গলগ্রহের দিকে যাত্রা করব।’
চাঁদে পৌঁছে প্রথমে তার কক্ষপথ ঘুরে দেখবেন মহাকাশচারীরা। তারপর তারা চাঁদে পা দেবেন। বস্তুত, এর ঠিক পরই আরও একটি চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা আছে নাসার। সে বিষয়ে অবশ্য এখনও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
নাসা জানিয়েছে, এটি একটি ঐতিহাসিক মিশন হতে চলেছে। এরপর থেকে চাঁদে যেতে চাওয়া ব্যক্তিদের আরটেমিস প্রজন্ম হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এদিন মহাকাশচারীদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছে নাসা। তারা সকলেই স্পেস স্যুট পরে ছিলেন।
নাসার এই ঘোষণার পর মহাকাশচারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, আগামী প্রজন্মের কাছে এই মিশন হবে অনুকরণীয়।
মিশনের আগে একটি উড়ান চাঁদে পাঠিয়েছিল নাসা। ঠিক যেভাবে এই মহাকাশচারীরা মহাকাশযানে চড়ে চাঁদের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করবেন, ওই ছোট্ট উড়ানটিও ঠিক সে কাজই করে এসেছে। ২৫ দিন চাঁদের কক্ষপথে থাকার পর তা পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। ওই সফল উড়ানের পরেই এদিন নাসা এই বিরাট খবর জানিয়েছে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে