গরমে অল্পতেই শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড রোদে ঘেমে শরীর একেবারে কাহিল হয়ে পড়ে। ঘামের কারণে শরীর থেকে সব তরল বেরিয়ে যায়। এ কারণে অল্পতেই পানিশূন্যতার শিকার হতে হয় গ্রীষ্মে। কাজ করার শক্তি থাকে না। তাই এই সময়ে খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি।
এই সময় এমন সব খাবার খেতে হবে যা খেলে শরীর ঠান্ডা রাখবে, তার সঙ্গে জোগাবে পুষ্টি। ‘বোল্ড স্কাই’য়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এমনই কিছু খাবারের কথা।
ভিটামিন সি: ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং উপকারী। এই ভিটামিন ত্বক সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। গরমের সময় ত্বক সবচেয়ে বেশি অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসে, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের উৎপাদন এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়াতে পারে। ভিটামিন সি অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র্যাডিক্যাল নিষ্ক্রিয় করে এবং ত্বকের ক্ষতি হতে দেয় না। এই সময় কমলালেবু, কিউই, পাতিলেবু, বাতাবি লেবু, টমেটো, আলু, স্ট্রবেরি, ব্রকোলি, পেঁপে – এই সব ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
ম্যাগনেশিয়াম: পেশি সুস্থ রাখতে এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য ম্যাগনেশিয়াম অপরিহার্য। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ইমিউনিটি শক্তিশালী করে তোলে। গরমের সময় প্রচুর ঘাম হয়, যে কারণে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। ম্যাগনেসিয়াম এক ধরনের ইলেক্ট্রোলাইট, যা শরীরে তরলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গরমে সুস্থ থাকতে চিয়া বীজ, আমন্ড, পালং শাক, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, সয়া দুধ, ডার্ক চকোলেটের মতো ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে পারেন।
পটাশিয়াম: ম্যাগনেশিয়ামের মতো, পটাশিয়ামও এক ধরনের ইলেক্ট্রোলাইট এবং শরীরে তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পেশি সুস্থ রাখে এবং স্নায়ু কার্যকারিতা উন্নত করে। গরমকালে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। যার ফলে পেশিতে খিঁচুনি, ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব হয়। তাই শরীর থেকে হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট পূরণে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই খান। বিনস, মসুর ডাল, ব্রকলি, অ্যাভোকাডো, কলা, ড্রাই ফ্রুটস যেমন কিশমিশ এবং এপ্রিকট – এগুলি পটাশিয়ামের দুর্দান্ত উৎস। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এসব খাবার রাখুন।
জিঙ্ক: জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার গরমকালে বেশি পরিমাণে খান। ইমিউনটি বাড়াতে এবং ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে জিঙ্ক। তাই রোগ প্রতিরোধ করতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জিঙ্ক গ্রহণ করুন। কর্নফ্লেক্স, দই, কাজুবাদাম, বাদাম, আস্ত শস্যদানা, কুমড়োর বীজে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে।
প্রোটিন: পেশি, হাড়, হরমোন এবং অ্যান্টিবডি-সহ শরীরের প্রতিটি কোষ প্রোটিন থেকে তৈরি। তাই শরীরের প্রতিটি কোষের প্রোটিন খুবই প্রয়োজন। শারীরিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্যও প্রোটিন অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সামুদ্রিক খাবার, ডিম, দুগ্ধজাত পণ্য, ডাল, বীজ এবং বাদাম প্রোটিনে ভরপুর। তাই এই সব খাবার অবশ্যই রাখুন ডায়েটে।
পানি: গ্রীষ্মকালে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর তরল বেরিয়ে যায়। তাই এই সময় হাইড্রেট থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা দিনে প্রচুর পানি পান শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি পানি পানের ফলে হজমও ভালো হয় এবং ত্বকও ভালো রাখে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এ ছাড়া, তরমুজ, শসা এবং সাইট্রাস ফলের মতো হাইড্রেটিং খাবার নিয়মিত খান।