সম্প্রতি মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র সিআইডির কাছে ধরা পড়েছে। তারা গত ১৬ বছর অন্তত ১০ বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। তার মানে, এ সময়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন, ডাক্তার হয়ে বেরিয়েছেন এবং অনেকে সরকারি চাকরিতেও যুক্ত হয়েছেন। বলা যায়, অর্থের বিনিময়ে লো গ্রেডেড ও লোভী শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতাকরা পৌঁছে দিয়েছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র; যার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেট।
ডাক্তাররা আমাদের বিশ্বস্তজন। যে কোনো অসুস্থতায় ছুটে যাই তাদের দুয়ারে। ডাক্তারদের চিকিৎসা শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং অসুস্থতা নির্ণয় ও চিকিৎসার অভিজ্ঞতার কারণে বিশ্বাস করি। নৈতিক মানদণ্ডের প্রতি ডাক্তারদের প্রতিশ্রুতি এবং রোগীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দায়িত্বের কারণেও তাদের প্রতি আমাদের আস্থা তৈরি হয়। কিন্তু জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে যারা ডাক্তার হয়েছেন, তাদের ওপর আমরা কীভাবে ভরসা করব? তাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাস থাকবে? কখনোই না।
সংবাদপত্র মারফত জানা গেল, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ১২ জন সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। ২০০১ থেকে ’১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এ চক্র মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। বিনিময়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দেওয়া বিপুলসংখ্যক ব্যাংকের চেক, প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃত অনেকেই মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। তারা তাদের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক পন্থায় ভর্তির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এসব চক্রের ৮০ জন সক্রিয় সদস্য গত ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছে। হাতিয়ে নিয়েছে শতকোটির বেশি টাকা।
জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে অনেকে পাস করে ডাক্তারও হয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুলসংখ্যক ব্যাংক চেক ও অ্যাডমিট কার্ড ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে অনৈতিক পন্থায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাস করা চিকিৎসকদের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন দ্রুত বাতিল করা হোক। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে যারা বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত, তাদের দ্রুত চাকরি থেকে অপসারণ এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাশাপাশি এসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকও সমান অপরাধী। ভবিষ্যতে যেন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়, সে জন্য প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
শেখ রিফাদ মাহমুদ, কানাইখালী, নাটোর