করোনা মহামারির এ ক্রান্তিকালে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী সাজেক ইউনিয়নে বেড়েছে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই, বেটলিং এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা দিয়েছে ম্যালেরিয়ার।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, এইসব এলাকার মানুষ জ্বর হলে ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কিনে খায়, ডাক্তারের পরার্মশ নেয় না। ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করতেও আসেন না। ব্যবহার করেন না মশারিও। এসব কারণে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিচ্ছে বারবার।
এলাকাবাসী জানায়, বাঘাইছড়িতে এ বছর একটানা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশার প্রজনন বেড়েছে। কারণ একটানা বৃষ্টিপাত না হলে পাহাড়ের বিভিন্ন গর্ত ও ছড়ায় পানি জমে মশার প্রজননে সুবিধা হয়। সন্ধ্যা থেকে মশারি ব্যবহার নিশ্চিত, আশপাশের ঝোপঝাড় ও নর্দমা দ্রুত পরিষ্কারের ব্যবস্থা এবং জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা তাদের।
বাঘাইছড়ির সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেনসন চাকমা জানান, সরকারি এবং বেসরকারি হিসাবের চেয়ে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হবে। কারণ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীরা রক্ত পরীক্ষা করতে আসে না। জ্বরের লক্ষণ দেখে লোকজন বাজারে এসে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে যায়। তারা মশারি ব্যবহার না করার কারণে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। ইউপি সদস্যদের নিয়ে জরুরি সভা করে এনিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছি।
রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, জেলায় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৩২৬ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রয়েছেন যার মধ্যে জুন মাসে ২১৭ জন এর মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৭৮জন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেকার আহমদ জানান, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুন মাসে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ৭৮ জন। তবে দুর্গম সাজেক ইউনিয়নকে আমরা ম্যালেরিয়ার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তিনি আরও জানান, যারা জুমে কাজ করে এবং মশারি ব্যবহার করছে না তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর একটানা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশার প্রজনন বেড়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে পাহাড়ের বিভিন্ন ঝিরি ও ছড়ায় পানি জমে মশার প্রজননে সুবিধা হয়। এ ছাড়া ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সেখান থেকেও ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সন্ধ্যা থেকে মশারি ব্যবহার, আশপাশের ঝোপঝাড় ও নর্দমা পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, জেলার ৪টি উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তবে গত বছরের তুলনায় বেশি না। আমি সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই সব এলাকায় বাড়তি নজর রাখার জন্য। এবং দ্রুত কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।