চাঁদপুরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। করোনা মোকাবিলার লড়াইয়ে মানুষের অংশগ্রহণও বাড়ছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠে আছেন রাজনীতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা। বিশেষ করে অক্সিজেন সেবার ব্যবস্থা করায় সংকটাপন্ন রোগীরা উপকৃত হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চাঁদপুরে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৪৪৩ জন। তাঁদের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত ১৯৯ জন মারা গেছেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে জেলায় আরও অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যথাসময়ে অক্সিজেন সেবা দিতে পারলে তাঁদের অনেকেরই প্রাণ বাঁচত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।বিজ্ঞাপনবিজ্ঞাপন
চাঁদপুরে এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত ১৯৯ জন মারা গেছেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যথাসময়ে অক্সিজেন সেবা দিতে পারলে তাঁদের অনেকেরই প্রাণ বাঁচত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির উদ্যোগে চাঁদপুরে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, জেনারেল হাসপাতাল, কমিউনিটি পুলিশ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও পেশাজীবী সংগঠনকে এগুলো দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক অনুষ্ঠান হয়। সেখানে এসব সামগ্রী বিতরণ করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
সুজিত রায় নন্দী বলেন, করোনা মোকাবিলায় দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। জনসাধারণের পাশে থাকতে আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।বিজ্ঞাপন
এদিকে কচুয়া উপজেলায় ২ আগস্ট থেকে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। তিনি একটি দল গঠন করে বাড়ি বাড়ি করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন।
ওই দলের প্রধান কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির। প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ২ আগস্ট থেকে ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত ৫২ করোনা রোগীকে অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৩ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা এবং মাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে।
এর আগে চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির উদ্যোগে জেলায় করোনা চিকিৎসায় বিভিন্ন সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। তাঁর উদ্যোগে গত বছর চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়। এবার দীপু মনি হাসপাতালের ১৫০ শয্যাভর্তি রোগীদের জন্য তরল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছেন।
হাইমচর উপজেলায় আটটি সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন দীপু মনির অনুসারী নেতা-কর্মীরা। যুবলীগের সাবেক নেতা আতিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, দীপু মনির পক্ষ থেকে তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা রোগীদের এ সেবা দিচ্ছেন।
এদিকে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি) আসনের সাংসদ মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম অক্সিজেন সেবা দেওয়া শুরু করেছেন। তিনি এলাকায় না এলেও তাঁর পক্ষে নেতা-কর্মীরা এ উদ্যোগে যুক্ত রয়েছেন। হাজীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্য জসিম উদ্দিন বলেন, সাংসদ রফিকুল ইসলাম নতুন করে ৪০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছেন। যে কেউ এ সেবা চাইলে তাঁরা বিনা মূল্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন।
অক্সিজেন সেবায় সামাজিক সংগঠন
রাজনীতিকদের বাইরে চাঁদপুরে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনও। বিনা মূল্যে এ সেবা দেওয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোশ্যাল এইডার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, আলোর মশাল অক্সিজেন সেবা, তারুণ্যের অগ্রদূত, সজাগ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চাঁদপুর ইউনিট, দিশারী সমাজকল্যাণ সংস্থা, সবুজ সংঘ, আলোর বাহন, সেন্দ্রা মানবিক সংস্থা, হ্যালো সেবা সেন্টার, সেভ দ্য পিপল অর্গানাইজেশন, সেভ লাইফ সাচার ব্ল্যাড ডোনেটিং ফাউন্ডেশন, লাইফ লাইন, রাজারগাঁও কোরআন শিক্ষা ফাউন্ডেশন, ডু সামথিং ফাউন্ডেশন মেডিকেল এইড, সুপ্ত ফাউন্ডেশন ও খিলা মানবিক সংস্থা।বিজ্ঞাপন
সোশ্যাল এইডার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের মুখপাত্র কাউসার হোসেন বলেন, ‘আমরা সংগঠনের চাঁদা দিয়ে প্রথমে চারটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে এ সেবা শুরু করেছিলাম। বর্তমানে ১৭টি সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ সেবা দিচ্ছি। এখন প্রতিদিন অক্সিজেন সেবার জন্য প্রচুর ফোন আসছে। তাই আমরা সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।