বেলজিয়ামে করোনাভাইরাসের নতুন আরেকটি ধরনের সংক্রমণে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। ধরনটি প্রথম ল্যাটিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায় শনাক্ত হয়েছিল। গতকাল সোমবার এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ওই ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়ছে। ইউরোপে এর প্রভাব খুবই কম ছিল তবে এবার এটি ইউরোপেওে এর সংক্রমণ লক্ষ করা যাচ্ছে। বেলজিয়ামে এ ধরনের সংক্রমণে যারা মারা গেছেন, তারা সবাই একটি নার্সিং হোমের বাসিন্দা ছিলেন।
গত শুক্রবার বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানিয়েছিলেন, মৃতরা সবাই করোনার পূর্ণ ডোজ টিকা নিয়েছিলেন। ফলে নতুন করে এই ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব লিউভেনের ভাইরোলজিস্ট মার্ক ভ্যান র্যানস্ট বলেন, তাদের বয়স ছিল ৮০ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। কয়েকজনের শারীরিক অবস্থা আগে থেকেই বেশ নাজুক ছিল।
ভাইরাসবিদরা জানান, করোনার নতুন এই ধরনটি হলো ‘বি.১.৬২১’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটির এখনো কোনো নামকরণ করেনি। বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নয় এটি (বি.১.৬২১) ডেল্টা বা ল্যামডার মতো ধরনের চেয়ে অধিক সংক্রামক কি-না। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের তথ্য অনুসারে, করোনার কলম্বিয়ার ধরনটির বিরুদ্ধে টিকা খুব কম কাজ করে।
এদিকে করোনার ল্যামডা ভেরিয়েন্ট চীনা ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে কাজ করে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গুয়াংঝুর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ঝুয়াং শিলিহে বলেছেন, চীনের তৈরি কভিড ভ্যাকসিন পেরুর ল্যামডা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধেও কার্যকর। তবে চীনা বাসিন্দারা চিন্তিত যে নতুন ল্যামডা ভেরিয়েন্ট হয়তো ভ্যাকসিনকে অকার্যকর করে ফেলবে। আর ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়াবে। যা থেকে মানুষ সহজে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না।
পেরুর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন কভিড-১৯ মৃত্যুরোধে ৯০ শতাংশ কার্যকর। গত ১৭ জুলাই চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সম্প্রতি জাপানে ছড়িয়ে পড়েছে ল্যামডা ভেরিয়েন্ট। অন্যদিকে চীন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্টে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩ শতাংশ সংক্রমণ ঘটাচ্ছে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। এর মধ্যে তারাও ল্যামডা ভেরিয়েন্টের কবলে পড়েছে।
ল্যামডা ভেরিয়েন্ট সি.৩৭ নামেও পরিচিত। ল্যামডা ভ্যাকসিনকেও কাবু করে ফেলে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। গ্লোবাল সায়েন্স ইনিশিয়েটিভ সংস্থা জিআইএসএইডের মতে, ল্যামডা দক্ষিণ আমেরিকার আটটি দেশে ও বিশ্বজুড়ে ৪১টি দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ল্যামডা প্রথম শনাক্ত করা হয় পেরুতে। বলা হচ্ছে, এটি ডেল্টা ভেরিয়েন্টের চেয়ে অতি সংক্রামক। তবে অনেক দেশেই ভেরিয়েন্টটিকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। কারণ, বিশ্ব এখন ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে। নতুন করে এই ভেরিয়েন্ট ‘বিশেষ মনোযোগ’ আকর্ষণ করতে পারছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও এই ভেরিয়েন্ট নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চীনের উহান থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাসের চেয়ে ল্যামডা বেশি শক্তিশালী।
সূত্র : রয়টার্স