30 C
Dhaka
Friday, May 10, 2024

চাকুরির খবর

অর্থনীতিতে ধর্মবিশ্বাসের প্রভাব

মানবজীবনের অন্য সব বিষয়ের মতো অর্থনীতিতেও ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান ও নির্দেশনা আছে। যেসব বিধান প্রমাণ করে ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সঙ্গে অর্থনীতির সুগভীর সম্পর্ক আছে। প্রশ্ন হলো, মানুষের আর্থিক কার্যক্রমের ওপর বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রভাব কী? কেনই বা মানুষের আর্থিক কার্যক্রমের ওপর নিয়ন্ত্রণারোপ করতে চায়? হুজ্জাতুল ইসলাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) তাঁর বিখ্যাত ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ গ্রন্থে উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরেছেন। তিনি অতীতের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রমাণ করেছেন যে সুনিয়ন্ত্রিত ও কল্যাণ অর্থনীতি ছাড়া কোনো জাতির মুক্তি ও আর্থিক স্থিতি অর্জন করা সম্ভব নয়।

তাঁর সংক্ষিপ্ত কথার বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বক্তব্য পাওয়া যায়।

রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের রাজত্ব যখন কয়েক শ বছর অতিক্রম করে এবং তারা পার্থিব জীবনকে তাদের জীবনের সব কিছুতে পরিণত করে, আর পরকালের কথা ভুলে যায়, তখন পার্থিব জীবনের উপায়-উপকরণই তাদের জীবনের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়। সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে সম্পদ অর্জন ও তা পুঞ্জীভূত করাই গর্বের বিষয়ে পরিণত হয়। তাদের এই আগ্রহের কারণে রোম ও পারস্যে পৃথিবীর এমন সব ব্যক্তি উপস্থিত হতে থাকে, যারা নিত্যনতুন বিলাসী পণ্য উদ্ভাবনে পারদর্শী। ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও বিপুল অর্থ ব্যয় করে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম কারুকাজসমৃদ্ধ বিলাস সামগ্রী নির্মাণ করতে লাগল। অর্থবিত্ত ও বিলাসিতার প্রকাশ্য প্রতিযোগিতা শুরু হয় রাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে। অহংকার ও অহমিকাও তাদের রক্ত-মাংসে মিশে যায়। এই ক্ষেত্রে তারা হয়তো ধর্মের নির্দেশনা অমান্য করেছিল অথবা ধর্ম তাদের এই অনাচারের অনুমতি দিয়েছিল। আর ধর্ম অনুমতি না দিলেও শাসকদের পোষ্য ধর্মপুরুষ তাদের অনাচারের ব্যাপারে ছিল নীরব।

রোম ও পারস্যের শাসক ও ধনীরা লজ্জা পেত যদি না তাদের কমরবন্দ ও মাথার মুকুটের মূল্য লাখ টাকা না হতো; যদি না তাদের সুরম্য প্রাসাদ, ঠাণ্ডা ও গরম পানির গোসলখানা, অতুলনীয় বাগান, দামি বাহন, সুন্দরী দাসী ও অসংখ্য সেবাদাস না থাকত; যদি না তাদের ঘরে নাচ-গান ও মদপানের বিপুল আয়োজন না হতো। এর প্রভাব সমাজের নিম্ন শ্রেণির ওপরও পড়ে। ফলে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিলাস সামগ্রীতে ব্যয় হয়ে যেত।

এই ভ্রান্ত বিশ্বাস ও প্রবণতা উভয় সাম্রাজ্যে বহুমুখী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল এবং জাতি হিসেবে তাদের পতন ত্বরান্বিত করে। যেমন তাদের অন্তরের শান্তি ও স্বস্তি দূর হয়ে যায়, হতাশা ও ক্লান্তি বেড়ে যায়, বিপুলসংখ্যক মানুষ দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা ও মনঃকষ্টে আক্রান্ত হয়। সম্রাট, মন্ত্রী, সেনা অফিসার ও আমলাদের বিলাসিতার চাহিদা মেটাতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশার লোকদের ওপর এত বিপুল পরিমাণ করারোপ করে যে তাদের কোমর ভেঙে যায়। তারা যদি কর দিতে অস্বীকার করত, তবে তাদের ওপর নেমে আসত রাষ্ট্রীয় অত্যাচার। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রাদের চাহিদা এত বেড়ে যায় যে সাধারণ মানুষ দিন-রাত পরিশ্রম করেও নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হতো না। অন্যদিকে রাষ্ট্রের মেধাবী মানুষগুলো সাধারণ মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলোর পরিবর্তে শাসকবর্গের তোষামোদ ও বিলাসসামগ্রী উদ্ভাবনে লিপ্ত হয়। এতে সমাজে আর্থিক বৈষম্য, জীবনযাত্রার মানে তারতম্য দ্রুত বেড়ে যেতে থাকে। ভোগের চাহিদার কারণে তাদের মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক দায়বোধও কমতে থাকে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তাও একেবারেই ভেঙে পড়ে। মোটকথা অস্বাভাবিক ভোগের তাড়নায় সমাজের উচ্চবিত্ত লোকেরা মানসিক গ্লানিতে আক্রান্ত ছিল, অন্যদিকে উচ্চবিত্তের ভোগের চাহিদা পূরণ করতে করতে নিম্নবিত্তরা নিঃস্ব হয়ে যায়।

অবশেষে আল্লাহর দয়ার সাগরে ঢেউ উঠল। তিনি নিষ্পেষিত মানুষের দিলের আরজি শুনলেন এবং ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ পাঠালেন। তাঁকে প্রচলিত সব মতবাদ ও ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিজয়ী করলেন। তাঁর ইন্তেকালের কিছু দিনের মধ্যে তাঁর দ্বিনের ঝাণ্ডাবাহীরা সভ্য পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে মুক্তির পয়গাম নিয়ে উপস্থিত হলো। মানুষ মুক্তির দিশা পেয়ে দলে দলে ইসলামের ঝাণ্ডাতলে সমবেত হলো এবং তাঁর ইনসাফ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থাকে নিজেদের জন্য অপরিহার্য করে নিল। ইসলামের সংস্পর্শে তারা একই সঙ্গে ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবেও মুক্তি পেল। বিশেষত তাদের বহুল প্রত্যাশিত আর্থিক মুক্তি ও নবজীবনের স্বপ্ন দেখাল। আর সম্ভব হয়েছিল ইসলামী অর্থনীতির সাম্য, সুবিচার, সুষম বণ্টন, কল্যাণকামিতা, পবিত্রতা ও প্রায়োগিকতার কারণেই।

ইসলামই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপ্রধানকেও জবাবদিহির মুখোমুখি করে, রাষ্ট্রীয় সম্পদে জনসাধারণের অধিকার ঘোষণা করে, সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে জাকাতের মতো বিধান প্রণয়ন করে, ব্যক্তিগত সম্পদেও অপচয়-অপব্যয় নিষিদ্ধ করে, অসহায় ও দুস্থ মানুষের প্রতি রাষ্ট্র ও ধনীদের দায়িত্ব ঘোষণা করে, সম্পদের মালিকানার ওপর আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে ভোগবাদী চিন্তার বিনাশ ঘটায়, সম্পদের আয়-ব্যয়ে পরকালীন জবাবদিহি ও পুরস্কার-শাস্তির ঘোষণা দেয়, সম্পদ পুঞ্জীভূত না করে তা উৎপাদনশীল ও কল্যাণকর কাজে ব্যয় করার নির্দেশ দেয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বহুমুখী সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ঘোষণা করে। ইসলামের বহুমুখী আর্থিক কর্মসূচি তত্ত্বকথায় সীমাবদ্ধ ছিল না। কেননা এসব কর্মসূচি মুসলমানের বিশ্বাস ও ধর্মীয় জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে।

‘ইসলাম কা ইকতিসাদি নিজাম’ অবলম্বনে

আরও সংবাদ

ভরা মৌসুমে চড়ছে চালের দাম

দেশে এ বছর আমনের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। বাজারে সরবরাহে ঘাটতি নেই, তার পরও চড়ছে চালের দাম। গত চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম...

সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড পেল ইমো

প্রবাসীদের যোগাযোগ সহজীকরণ থেকে শুরু করে সরকারের ৩৩৩ হেল্পলাইনের সঙ্গে সংযুক্তি, বছরজুড়ে নানাবিধ সামাজিক সেবামূলক কাজ চালিয়ে গেছে বিশ্বের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ইমো।...

সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১০ মে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প সরকারি সাত কলেজ, প্রযুক্তি ইউনিট এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রগ্রামে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা আগামী...

একটি মন্তব্য প্রদান করুণ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Stay Connected

- Advertisement -

সর্বশেষ সংবাদ

ভরা মৌসুমে চড়ছে চালের দাম

দেশে এ বছর আমনের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। বাজারে সরবরাহে ঘাটতি নেই, তার পরও চড়ছে চালের দাম। গত চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম...

সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড পেল ইমো

প্রবাসীদের যোগাযোগ সহজীকরণ থেকে শুরু করে সরকারের ৩৩৩ হেল্পলাইনের সঙ্গে সংযুক্তি, বছরজুড়ে নানাবিধ সামাজিক সেবামূলক কাজ চালিয়ে গেছে বিশ্বের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ইমো।...

সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১০ মে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প সরকারি সাত কলেজ, প্রযুক্তি ইউনিট এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রগ্রামে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা আগামী...

মেসিকে নিয়ে মুখ খুললেন খেলাইফি

বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তির ঝামেলায় আটকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে পিএসজিতে যোগ দেন মেসি। কিন্তু ফরাসি ক্লাবটিতে তার দুই বছর ঠিক সাফল্যময় হয়নি।...

পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম

ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালামকে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শপথগ্রহণের পর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের...