বাংলাদেশে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অতিরিক্ত সময় মোবাইল ফোন নিয়ে বসে থাকলে মানসিক চাপ (স্ট্রেস) বেড়ে গিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। গতকাল রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস-২০২২ (২৯ অক্টোবর) উপলক্ষে আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক শারফুদ্দিন স্ট্রোক রোধে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দ্রব্যের সাশ্রয় করতে বলেছেন।
ওষুধের পেছনে যাতে বেশি অর্থ ব্যয় না করতে হয়, সেদিকে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ জন্য রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে। ’ নিউরোসার্জারি বিভাগ আয়োজিত সেমিনারে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। বিশ্বের মৃত্যুর প্রতি চারজনের একজন স্ট্রোকে হয়। প্রতি মিনিটে স্ট্রোকের কারণে ১০ জনের মৃত্যু হয়। বিশ্বে প্রতি হাজারে ৮ থেকে ১০ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বে প্রতি লাখ শিশুর মধ্যে দুই থেকে ১৩টি শিশু স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। বছরে ১০ থেকে ২৫ ভাগ শিশু স্ট্রোকে মারা যায়। স্ট্রোকে আক্রান্ত ৬৬ শতাংশ শিশুর হাত-পায়ের দুর্বলতা, খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
সেমিনারে নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রকিবুল ইসলাম স্ট্রোকের রোগীর অস্ত্রোপচারের (অপারেশন) প্রয়োজনীয়তা ও সুযোগ সম্পর্কে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে সময়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মেজর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ছয় ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তারের কাছে এলে অপারেশন করে জীবন বাঁচানো ও পঙ্গুত্ব রোধ করা সম্ভব। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেকেই আসতে পারে না। কিন্তু বেশি দেরি করলে জীবন বাঁচানো গেলেও পঙ্গুত্ব ও অন্যান্য শারীরিক ক্ষতি রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে অনেক ক্ষেত্রেই। ’ রাজধানীর বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সসহ দেশের ১৫টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্রোকের অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে বলে সেমিনারে জানানো হয়। বলা হয়, ৮০ শতাংশ স্ট্রোক আক্রান্তই ওষুধের মাধ্যমেই ভালো হয়। এ ছাড়া সেমিনারে নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে এম তারিকুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামসুল আলম পৃথক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেমিনারে বলা হয়, স্ট্রোক প্রতিরোধে সাতটি পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো খাবারে তেল ও লবণের ব্যবহার কমানো, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা ও মানসিক চাপ কমাতে উপাসনা বা মেডিটেশন করা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউর নিউরো সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন খান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্ট্রোকের চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থাপনা নিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনসের সভাপতি ও বিএসএমএমইউর সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি ও নিউরোলজি বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের অধ্যাপক, শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।